কাছাকাছি: (বাঁ দিকে) সিপিএমের সম্মেলনের মঞ্চে বিমান বসু। (ডান দিকে) ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভা। ছবি: সুজিত মাহাতো
সিপিএমের জেলা সম্মেলনের আধ কিলোমিটার দূরে, একই দিনে ব্লকের মহিলা সমিতির সভা করল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। তার আগে একই দিনে, কাছাকাছি এই সভা করাটা রাজনীতির চাল বলেই মনে করছেন দুই দলের নিচুতলার কর্মীরা। সিপিএমের দাবি, শাসকদল পুঞ্চায় তাঁদের সংগঠনের জোর দেখে ভয় পেয়েছে। তবে তৃণমূল এ কথা মানতে নারাজ।
শনি ও রবিবার সিপিএমের ২০তম বার্ষিক পুরুলিয়া জেলা সম্মেলন হচ্ছে পুঞ্চায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলা সম্মেলনের জন্য পুঞ্চাকে বেছে নেওয়াটা আকস্মিক নয়। এখনও পুঞ্চায় সিপিএমের সংগঠন ভাল রয়েছে। পুঞ্চা পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। গত পঞ্চায়েত ভোটে, পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল তারা। কিন্তু এক সদস্য তৃণমূলে যাওয়ায় সেটা হাতছাড়া হয়। তবে এলাকায় এখনও ভাল জনসংযোগ আছে বলেই মনে করেন নেতারা। এ বারের সম্মেলনে এসেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী, বাসুদেব আচারিয়া, অমিয় পাত্র, জেলা সম্পাদক মনীন্দ্র গোপের মতো শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। শনিবার লৌলাড়া কলেজের সামনের জমিতে ছিল প্রকাশ্য সমাবেশ।
প্রায় দু’সপ্তাহ আগে থেকে পুঞ্চা বাজারে বিশাল তোরণ তৈরি করেছিল সিপিএম। পুঞ্চা বাজার এলাকা দলের ঝান্ডায় প্রায় মুড়ে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বৃহস্পতিবার থেকে দেখা যায়, সিপিএমের লাল ঝান্ডার পাশে তৃণমূলের পতাকাও ঝুলছে। মানবাজারের দিক যেকে যাওয়ার পথে পুঞ্চা থানার সামনে সিপিএমের তোরণের আগে বিশাল তোরণের কাঠামো তৈরি হচ্ছিল। দেখা গেল, সেটা তৃণমূলের— ব্লক অফিসের মাঠে দলের মহিলা সমিতির সম্মেলন হবে। লৌলাড়া কলেজ থেকে সেই মাঠের দূরত্ব আধ কিলোমিটারের অল্প বেশি।
তৃণমূলের কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ বলেন, ‘‘পুঞ্চায় আময়াদের জেলা সম্মেলন হবে এটা অনেকদিন আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুমতিও নিয়েছি। তার পরেও ওঁরা শনিবারই দলের সম্মেলন করলেন। এর থেকেই বোঝা যায়, ওঁরা আমাদের ভয় পাচ্ছেন।’’ বিমানবাবু বলেন, ‘‘ওই দল গণতন্ত্রের ধার ধারে না। উলুবেড়িয়াতে আমাদের যে দিন সভা ছিল, গিয়ে দেখি রাতারাতি সমস্ত রাস্তা ওঁদের ঝান্ডায় ছয়লাপ করে দিয়েছেন। এখানেও তা-ই।’’
তবে তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসি়ডেন্ট, পুঞ্চার লাখড়া গ্রামের বাসিন্দা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘অনেক আগে থেকে আমাদের দলের কর্মসূচি ঠিক ছিল। সিপিএম আগে থেকে তোরণ বেঁধে যাতায়েতের পথে বাধা তৈরি করেছিল। আমরা মানুষের কথা ভেবে সম্মেলনের মাত্র দু’দিন আগে গেট বেঁধেছি।’’ তৃণমূলের এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ায় দলের মহিলা সভানেত্রী নিয়তি মাহাতো, মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, দলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতো প্রমুখ।
দুই দলের কর্মসূচিই এ দিন মিটেছে ভালয়-ভালয়। নিরাপত্তার জন্য দু’জায়গাতেই ছিল চোখে পড়ার মতো পুলিশি বন্দোবস্ত। বিশাল বাহিনী নিয়ে পুলিশ কর্তারা টহল দিয়েছেন। কিন্তু একই দিনে কাছাকাছি, দুই দলের সম্মেলনের অনুমতি দেওয়া হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বছরখানেক আগেই পুঞ্চা বাজারে সিপিএমের মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছিল।
তার পরেও ঝুঁকি নেওয়া হল কেন? এই ব্যাপারে পুলিশ কর্তারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘স্থানীয় নেতাদের অনুরোধের মর্যাদা দিতে পুঞ্চায় শনিবার সম্মেলন হয়েছে। শুনেছি দুই দলের সম্মেলন শেষ হয়েছে শান্তিপুর্ণ ভাবে।’’