চলছে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। — নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে মনোনয়নের প্রাথমিক পর্ব। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাপকাঠি হিসাবে ধরা হলে এ বার মনোনয়নপত্র জমার সংখ্যার নিরিখে শাসকের পাশে যথেষ্ট উজ্জ্বল বিরোধীরাও। কিন্তু, মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর প্রকৃত ছবিটা কী দাঁড়ায়, সেটাই এখন মূল আশঙ্কা বিরোধী শিবিরের। প্রার্থিপদ বাঁচাতে কাউকে কাউকে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময় শেষে জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮৫৯টি আসনের জন্য শাসক বিরোধী মিলিয়ে মোট ৭২৩০টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। ১৫৬৩টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে বিজেপি। সিপিএম ১৫১৯টি আসনে, ফরওয়ার্ড ব্লক ১২০টি এবং কংগ্রেস ৫৩৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূলের ২৯১৬ জন প্রার্থী গ্রাম পঞ্চায়েতে মনোনয়ন দিয়েছেন। অন্য দিকে, জেলার ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৪৯০টি আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৪৫৩টি। ৫১৯টি মনোনয়ন তৃণমূলের। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস যথাক্রমে ৩৮৪, ৩২৩ এবং ৯৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ৫২টি জেলা পরিষদ আসনের জন্য শাসক ও বিজেপি দু’দলের তরফে ৫৯টি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে। সিপিএম ৪৬টি ও কংগ্রেস ১৬টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদে আসন ছিল ৪২টি। একটিতেও বিরোধী প্রার্থী ছিলেন না। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৬৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬০টিতে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২৪৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৭৯টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। এ বার সেখানে ছবিটা অনেক ভাল। যা ভাবাচ্ছে শাসক-শিবিরকেও। তৃণমূলের এক জেলা স্তরের নেতা বলেন, ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল ক্ষমতা দখলের মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারবে না। তা হলে ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। ভোট করতে না দেওয়ার বদনামও ঘুচবে। কিন্তু, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে ছবিটা ঘুরে গিয়েছে।’’
জেলার এক সিপিএম নেতা গত পুর-নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কথা মনে করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচটি পুরসভার মোট ৯৩টি ওয়ার্ডে পুরভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন করতে না-দেওয়ায় বা মনোনয়ন করলেও নানা ভাবে প্রত্যাহারে করিয়ে নেওয়ায় মাত্র ৪৩টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। সেটাকে আর যাই হোক নির্বাচন বলা যায় না।’’
আজ, শনিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নের স্ক্রুটিনি। ২০ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন ধার্য হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, ‘খেলা’ শুরু হয়েছে। মল্লারপুর এবং সাঁইথিয়া ব্লক এলাকার দুই বিজেপি প্রার্থীর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য তৃণমূলের লোকেরা বাডিতে এসে হুমকি দিচ্ছেন। বিজেপির বীরভূম সাংঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘২০ তারিখ পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে, তার উপরে আমাদের প্রার্থীদের টিকে থাকা অনেকাংশে নির্ভর করছে।’’ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে তৃণমূল মরিয়া। বাধ্য হয়ে আমরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পার না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থীদের আত্মগোপন করে থাকতে বলেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বৃহস্পতিবার মনোনয়নের শেষ দিনে আমাকে কী ভাবে মারধর করা হয়েছে, সবাই দেখেছে। যাঁরা প্রার্থী হয়েছে তাঁদের প্রতি হুমকি-আক্রমণ চলছে। কত জনের প্রার্থিপদ ধরে রাখা যাবে, সেটাই দেখার।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের বক্তব্য, ‘‘শাসকদলের নেতারা শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর অভয় দিচ্ছেন। অথচ আড়ালে তার বিপরীতটাই ঘটছে। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য আমাদের প্রার্থীদের প্রতি চাপ শুরু হয়েছে। এলাকাগত ভাবে সেটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রশাসনের কাছেও জানাব।’’
তৃণমূল জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চোধুরী অবশ্য বিরোধীদের আশঙ্কা ও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখনও এত করুণ দশা হয়নি যে, বিরোধী প্রার্থীদের পিছনে ছোটাছুটি করতে হবে! মনোনয়নে তো কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। আমরাও নিশ্চিত নই বিরোধী কতজন প্রার্থী টিকে থাকবে। ওদের লোকবল বা সংগঠন কোনওটাই নেই।’’