ধৃত: বোলপুর আদালত চত্বরে কৌস্তভ। নিজস্ব চিত্র
কথাবার্তায় তুখোড়, ধোপদুরস্ত পোশাক, বিলাসবহুল জীবন ও আদব-কায়দা দেখে তিনি যে আইবি অফিসার নন তা প্রথম দর্শনে ভাবেননি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে চাকরি প্রার্থীরা। তার জন্য লক্ষাধিক টাকা ঘুষ দিতেও পিছপা হননি অনেকেই। যদিও চাকরি মেলেনি শেষ অবধি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় মাঝে মাঝেই সাহায্যের নামে ভুয়ো চেক দেওয়া থেকেই সন্দেহটা আরও জোরালো হয়।
পুলিশের কাছে প্রতারণার অভিযোগ জমেছিল বেশকিছু। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকেও অভিযোগ হয়েছিল বিষয়টি নিয়ে। বুধবার রাজ্য পুলিশের এসটিএফ নানুরের দাসকল গ্রামে হানা দিয়ে কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় নামে বছর পঁয়তিরিশের এক যুবককে গ্রেফতার করে। অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার বোলপুর আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত নানুর থানায় রাখা হয়েছে কৌস্তভকে। প্রতারণার বিভিন্ন ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সরকারি আইনজীবী শ্যামসুন্দর কোনার জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক-সহ বেশ কিছু সরকারি দফতরের জাল স্ট্যাম্প ও স্ট্যাম্পপ্যাড আটক করা হয়েছে।
এ দিন পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন এই যুবক। প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে জাল নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা নিয়েছন। চাকরির টোপ দিতে নিজেকে আইবি অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় যুক্ত হতেন। কখনও অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া, কখনও রক্তদান কর্মসূচিতে সাহায্য করার নানা রকম প্রলোভনও থাকত। তাঁর জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসায় দাসকল গ্রামের বাড়ির সামনে বিক্ষোভও দেখানো হয় কিছুদিন আগে। নিজেকে আড়াল করতে শান্তিনিকেতনে একটি বাড়ি ভাড়াও নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি একটি গাড়িও ভাড়া করেন, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নকল স্টিকার লাগানো ছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। শান্তিনিকেতনের ওই বাড়ির মালিক মাস আটেক আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন কৌস্তভ বাড়িভাড়া না দিয়েই চম্পট দিয়েছেন বলে। একই অভিযোগ করেন গাড়ির মালিকও। এরপরেই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গেও আদৌ তাঁর কোনও সংযোগ আছে কি না তা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু হয়।
বাজেয়াপ্ত: উদ্ধার হয়েছে জাল স্ট্যাম্প। নিজস্ব চিত্র
সরকারি আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘নিজেকে গোয়েন্দা অফিসারের পরিচয় দিয়ে বেকার যুবক যুবতীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারক সব শোনার পর অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করেন এবং তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।’’
তদন্তকারীদের অনুমান, এটি একটি বড় প্রতারণাচক্র। এর সঙ্গে দিল্লি ও মুম্বইয়ের বেশ কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। এ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরেই ওই যুবককে জেরা করা শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।