lavpur

চোখে আলো হারিয়েও, আলো দেখাচ্ছেন অন্যকে

লাভপুরের শাঁখপুর গ্রামে বাড়ি বছর তিরিশের জগৎদূতের। বাবা অজিত মণ্ডল প্রান্তিক চাষি। মা রেখা গৃহবধূ। তিন ভাইয়ের ছোট জগৎদূতবাবুর বাঁ চোঁখের অসুখ ধরা পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০৫
Share:

ক্লাসে পড়ুয়াদর পড়া বোঝাচ্ছেন জগৎদূত। নিজস্ব চিত্র

চোখে আলো নেই। তা বলে অন্যকে অলোকিত করার কাজ থামাননি। ছাত্রাবস্থায় নিজে দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কিন্তু, হতোদ্যম না-হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, পড়ুয়াদের শিক্ষার আলো দেখাচ্ছেন জগৎদূত মণ্ডল।

Advertisement

লাভপুরের শাঁখপুর গ্রামে বাড়ি বছর তিরিশের জগৎদূতের। বাবা অজিত মণ্ডল প্রান্তিক চাষি। মা রেখা গৃহবধূ। তিন ভাইয়ের ছোট জগৎদূতবাবুর বাঁ চোঁখের অসুখ ধরা পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। চিকিৎসা করিয়েও কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা পড়াশোনা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছায় সমানতালে পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। ফলে, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফের ডান চোখে অসুখ দেখা দেয়। সে বারেও চিকিৎসা বিফলে যায়। পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারান জগৎদূত।

আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। তিনি এ বারও কিন্তু হতোদ্যম হয়ে পড়েননি। বরং মনের মধ্যে একটা অদ্যম জেদ চেপে যায়। কলকাতার বেহালার একটি সংস্থা থেকে ব্রেইলে পঠন-পাঠন শিখে বৈদ্যপাড়া হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, লাভপুরের লাভপুরের আবাডাঙা গোপেশ্বর হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং লাভপুর শম্ভুনাথ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন। তার পরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের শিক্ষক শিক্ষণ প্রশিক্ষণের পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম পাস করেন। ২০২১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন লাভপুরের পাঁচপাড়া ১ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।যতই প্রতিবন্ধতা থাক না কেন, স্কুল তাঁর আসা চাইই চাই।

Advertisement

মেজদা রাজদূত মণ্ডল টোটোচালক। তাঁর টোটোতে স্কুলে নিত্য যাওয়া-আসা করেন। ইতিমধ্যেই সহকর্মী, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলেছেন। পঞ্চম শ্রেণির দিলেরা খাতুন, সুস্মিতা দাসেরা জানায়, ‘‘স্যর আমাদের মুখে মুখে পড়ান। তাই সহজেই রপ্ত হয়ে যায়। তার পরে পালাক্রমে আমাদের দিয়েই বোর্ডে লেখান। তাতে আমাদের ভয় ভেঙে যায়।’’ অভিভাবক অরূপকুমার সিংহ, চৈতালি সরকারেরা বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়ের মুখে প্রায়ই ওই শিক্ষকের নাম শুনতে পাই।’’ ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীতা ঘোষেরা বলেন, ‘‘শুধু পঠন-পাঠনই নয়, স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও উনি প্রতিবন্ধকতা জয় করে সমান ভাবে অংশ নেন।’’

জগৎদূত বলেন, ‘‘আমাদের অভাবে সংসার। আমার চিকিৎসার জন্য সংসার আরও বেহাল হয়ে পড়ে। তাই আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। পড়াশোনার সময়ে বন্ধুবান্ধবদের সাহায্য পেয়েছি। এখন অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী এবং সহকর্মীরা আমার পাশে রয়েছেন বলেই এগিয়ে যেতে পারছি।’’ এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের লড়াই অন্যদের উদ্বুদ্ধ করবে। তার লড়াইকে স্বীকৃতি দিতে শীঘ্রই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement