গ্রামে ফিরে বিজেপি কর্মীরা দেখলেন, এমনই দশা হয়েছে বাড়ির। মঙ্গলবার কঙ্কালীতলার মহুলায়। — নিজস্ব চিত্র।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ওঁদের ঘরে ফেরা হয়নি। প্রায় তিন বছর ঘরছাড়া থাকার পরে মঙ্গলবার বোলপুরের কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের মহুলা গ্রামে, নিজেদের বাড়িতে ফিরলেন পাঁচ জন বিজেপি কর্মী। গ্রামে থাকতে যাতে তাঁদের কোনও অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ তাঁদের আশ্বস্ত করেছে। যদিও আতঙ্ক কাটছে না বলে দাবি ওই পাঁচ বিজেপি কর্মীর।
বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দলীয় কর্মীরা ও তাঁদের পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের দিন ইলামবাজারে বিজেপি কর্মী গৌরব সরকার খুন হন। কঙ্কালীতলার মহুলা এলাকার বিজেপি কর্মী করুণাময় পাল, রাজীব পাল, অসীম পাল, গোপাল পাল-সহ আরও কয়েক জন বিজেপি কর্মী- সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলার ভার পরে সিবিআইয়ের হাতে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। অনেকে আগাম জামিন পেয়েছেন।
বিজেপি-র দাবি, তিন বছর ধরে শাসকদলের ‘সন্ত্রাসের’ ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না মহুলা গ্রামের ওই পাঁচ জন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা। এত দিন কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কেউ বা কারখানায় কাজ করে বোলপুর শহরে থাকছিলেন। প্রশাসনের আশ্বাসে এ দিন তাঁদের গ্রামে ফেরানো হয়। তাঁদের সঙ্গে গ্রামে আসেন বিজেপি-র মহিলা তফসিলি মোর্চার রাজ্য সহ-সভাপতি প্রিয়াঙ্কা মিস্ত্রি, জেলার নেতা রাজেশ সেনচৌধুরী, বোলপুর সাংগঠনিক জেলার জেলা সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস। গ্রামে মোতায়েন ছিল পুলিশের একটি টহলদারি গাড়ি।
চোখে জল নিয়েই এ দিন বাড়ি ফেরেন করুণাময়, রাজীবেরা। দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া থাকায় বাড়ির চারপাশ ভরেছে আগাছায়। বাড়িগুলিও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে। বাড়িঘরের ওই হাল দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার পরে ঘর পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। বিজেপি কর্মী অসীম পাল বলেন, “এতদিন পরে গ্রামে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। তবে, এর সঙ্গে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। আবার আমাদের উপর হামলা হবে কি না, তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।” প্রিয়াঙ্কা বলেন, “পাঁচ জনকে ঘরে ফেরালাম। পরবর্তী ক্ষেত্রে এঁদের কোনও সমস্যা হলে তার দায় নিতে হবে এখানকার পুলিশ-প্রশাসনকে।”
রাজ্যের মন্ত্রী, এলাকার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘ভোটের পরে হামলা চালানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৃণমূলকে বদনাম করার জন্য মিথ্যা দোষ চাপানো হচ্ছে।’’