ফল ঘোষণা শুরু হওয়ার কিছু পরেই বিষ্ণুপুরে গণনাকেন্দ্রের বাইরে ক্যাম্প থেকে সরে যান বিজেপি ও সিপিএমের কর্মীরা। ছবি: শুভ্র মিত্র।
বামেদের ভোট ফিরতেই বাঁকুড়ায় শক্তিহারা হল বিজেপি। সামগ্রিক ভাবে নামমাত্র আসনে জয় পেলেও এ বারে ভোট-শতাংশ বেড়েছে বামেদের। বিরোধী-ভোট ভাগ হওয়ায় এই সুফলে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কার্যত একচেটিয়া জয় পেয়ে লোকসভার আগে আত্মবিশ্বাসও বাড়ল তৃণমূলের।
মঙ্গলবার গণনাকেন্দ্রে ভোটবাক্স খুলতেই শুরু হয় সবুজ ঝড়। বিরোধীদের পিছনে ফেলে একের পর এক আসন আসতে থাকে ঘাসফুল শিবিরের দখলে। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জনভিত্তি হারিয়ে জেলায় কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়া বামেরাও কিছু আসনে ভাল ফল দেখাতে শুরু করে। তখনই দলের ফলাফল কেমন হবে, আশঙ্কা দানা বাধতে থাকে গেরুয়া শিবিরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় কেবলমাত্র একটি পঞ্চায়েতে (খাতড়ার গোড়াবাড়ি) বিজেপি জেতে। তবে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হয়েছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র এলাকায়। ওই কেন্দ্রের ওন্দা ও সোনামুখী ব্লকে যথাক্রমে পাঁচটি ও চারটি পঞ্চায়েত দখল করেছে গেরুয়া শিবির।
রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জেলায় পঞ্চায়েতের ৩১২৯টি আসনের মধ্যে ৩০৭৩টি আসনের গণনা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল ২৩০৯টি, বিজেপি ৫৩৭টি, বামফ্রন্ট ১৪৩টি ও কংগ্রেস ৬টি আসন পেয়েছে। ৭৮টি আসনে জিতেছেন নির্দলেরা।
পঞ্চায়েত স্তরে ফলের এমন প্রবণতায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে জেতা নিয়েও কার্যত আশা দেখছেন না বিরোধীরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, সিপিএমের ভোট বাড়াতেই একচেটিয়া ফলাফল তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী-ভোট একজোট হয়ে বিজেপির দিকে যাওয়ার যে প্রবণতা, এ বারে তাতে ছেদ পড়েছে জেলায়। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “যে সন্ত্রাসের আবহে ভোট হয়েছে, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। তবে সামগ্রিক ভাবে আমাদের ভোট অনেকটা বেড়েছে।”
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের তবে দাবি, “এই ফলাফলকে মানুষের রায় ভাবলে ভুল হবে। কারণ, জেলার ৯০ শতাংশের বেশি বুথে প্রকৃত অর্থে ভোট হয়নি।”
তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলার ভোট পর্যবেক্ষক সমীর চক্রবর্তী বলেন, “সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রামীণ উন্নয়ন ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারের ঝড় ব্যালটবক্সে জোয়ার এনেছে।”
গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে জেলায় হাওয়ায় ভর করে জিতেছিল বিজেপি। এই ভোটে ওরা রাজনৈতিক দলের বদলে ক্লাবে পরিণত হয়েছে, কটাক্ষ তাঁর।