সিউড়িতে দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে প্রথম জেলা সফর তিনি শুরু করলেন বীরভূম দিয়ে। এবং সেই প্রথম সফরেই নাম না-নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে কটাক্ষ করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সঙ্গে দাপুটে তৃণমূল নেতার উদ্দেশে রইল প্রচ্ছন্ন হুমকিও।
বৃহস্পতিবার সিউড়িতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন সুকান্তবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ দিন সিউড়ির রামকৃষ্ণ সভাগৃহে নবনির্বাচিত ও সদ্য প্রাক্তন দুই রাজ্য সভাপতির সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে একাধিক বার্তা দেন। পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসায় পাশে দাঁড়াতে না পারার জন্য কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। অনুব্রত মণ্ডলকে নাম না-করে কটাক্ষ করেন।
এ বার বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের ১১টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছি মাত্র একটি। সুকান্তবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এই জেলায় প্রায় ৪৩ -৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছি। আর এক আধপাগলা ‘বিচ্ছুর’ ভয়ে আমরা কি ঘরে ঢুকে যাব! যাঁর মাথায় ঠিক মতো অক্সিজেনই পৌঁছয় না! আপনারা সকলে মিলে লড়াই করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনারাই ওঁর মাথায় ঠিক মতো অক্সিজেন পৌছে দিতে পারবেন।’’ এখানেই না থেমে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বিচ্ছু যখন ঘরের মধ্যে ঢুকে য়ায়, বিচ্ছুর সঙ্গে কী করতে হয়, আপনারা জানেন। দরকার হলে সেটা করবেন, দল আপনাদের পাশে থাকবে।’’
অনুব্রত নিজে অবশ্য সুকান্তর হুমকিকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। এ দিন সিউড়িতেই দলের জেলা কার্যালয়ে বৈঠক শেষে তৃণমূলের জেলা সভাপতির প্রতিক্রিয়া, ‘‘মারতে গেলে হাতের দরকার হয়। কিন্তু হাতের কব্জিটাই যদি ভেঙে যায়! ময়দানে থেকে করুক ভাল লাগবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির যায় যায় অবস্থা, তার পর এই কথাটা। বুদ্ধির অভাব। দিলীপ ঘোষ জানত যে ওকে পদ ছাড়তে হবে, তাই ইচ্ছা করে পাগলামি করছিল। এ (সুকান্ত) আরও বড় পাগল!’’
কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে তাঁর আরও বার্তা, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা ঘরে ঢুকে গেলে সেই সমস্ত লোকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, যাঁরা আমাদেরকে সাহস করে ভোট দিয়েছেন। কী হবে, পুলিশ কেস দেবে। এখনও মামলা হচ্ছে। যখন মামলা খেতেই হবে, তখন মার খেয়ে মামলা খাওয়ার থেকে মার দিয়ে মামলা খাওয়া অনেক ভাল।’’ তাঁর আশ্বাস, পার্টি দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়াবে, জামিন করাবে। রাজ্য সভাপতি এ কথা বললেও ঘটনা হল, এই মুহূর্তে জেলায় বিজেপি-র সংগঠন খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই। বড় কোনও আন্দোলন বা কর্মসূচিও নিচ্ছেন না জেলা নেতৃত্ব। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই নানা জায়গায় শাসকদলের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ উঠলে সে সময় জেলা বিজেপি নেতারা সাধারণ কর্মীদের পাশে দাঁড়াননি বলে অভিযোগ। এই নিয়ে দলের অন্দরে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে।
এ দিন অবশ্য এর জন্য প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করে নিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের পর হয় তো আমরা সবার পাশে দাঁড়াতে পারি নি৷ সেই নিয়ে আমাদের অনেক কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। আমি হাতজোড় করে তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল, আমরা দাঁড়াতে পারি নি।’’
সূত্রের খবর, এ দিনের সাংগঠনিক বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশে রাজ্য সভাপতি জানিয়ে দেন, পরের লোকসভা ভোটে রাজ্য থেকে দল ২০-র বেশি আসন চায় এবং এই জেলা থেকেও লোকসভা আসন তাঁর চাই। পাশাপাশি আসন্ন পুরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই লোকসভা ভোটের জন্য ঘর গোছানোর বার্তা দেন তিনি।