Controversy

দুষ্কৃতীর মাথায় মন্ত্রীর ‘হাত’, ছবি-তরজা

দোকানের আহত কর্মী মহীতোষ ঘোষের প্রেসক্রিপশনে তাঁর আঘাত নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য লেখা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে যাদব সমাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৫
Share:

সমাজ মাধ্যমের সেই ছবি।

দোকানের কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া ও ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনায় খাতড়ায় বিভিন্ন মহল প্রতিবাদে সরব হলেও শুক্রবার পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির ভাইফোঁটা দেওয়ার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ তুলেছেন, মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই অভিযুক্তকে ধরছে না পুলিশ। যদিও মন্ত্রী বা পুলিশ সে দাবি মানেনি।

Advertisement

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘হামলার অভিযোগের ইনজুরি রিপোর্ট দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

যদিও দোকানের আহত কর্মী মহীতোষ ঘোষের প্রেসক্রিপশনে তাঁর আঘাত নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য লেখা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে যাদব সমাজ। সংগঠনের দাবি, মহীতোষ তাঁদের সমাজের প্রতিনিধি। খাতড়া হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময় চিকিৎসক মহীতোষকে মাথার স্ক্যান করার পরামর্শ মৌখিক ভাবে দিলেও তা প্রেসক্রিপশনে লেখেননি। বিষয়টি তাঁরা বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে জানান।

Advertisement

খাতড়া ব্লক যাদব সভার কার্যকরী সভাপতি সব্যসাচী মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘মামলাটি লঘু করে দেখাতে মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রভাবিত করা হয়ে থাকতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।’’ খাতড়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার অসিতবরণ হেমব্রম বলেন, ‘‘পুলিশ ইনজুরি রিপোর্ট চাইলেই আমরা পাঠাব। যে চিকিৎসক সে দিন দায়িত্বে ছিলেন, সোমবার তিনি এলে তাঁর সঙ্গে কথা বলব।’’

রবিবার রাতে খাতড়ার সিনেমা রোডে একটি দোকানে তৃণমূলের পঞ্চয়েত সদস্য-সহ দুই দলীয় কর্মী হামলা চালান বলে অভিযোগ। দোকানের মালিক পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার খাতড়ায় ১২ ঘণ্টা ব্যবসা বন্‌ধের ডাক দেয় বিজেপি। যদিও তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। তবুও বন্‌ধের প্রতিবাদে তৃণমূলও বুধবার পাল্টা মিছিল করে। প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি।

সমাজমাধ্যমে যে ছবি ঘুরছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিজের কার্যালয়ে ওই হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত প্রসূন পণ্ডাকে ভাইফোঁটা দিচ্ছেন মন্ত্রী জ্যোৎস্না। সমাজমাধ্যমে খাতড়া বিজেপি মণ্ডল ২-র তরফে পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, ব্যবসায়ী ও তাঁর দোকানের কর্মীকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত প্রসূন পন্ডা মন্ত্রীর কাছের লোক বলে এখনও গ্রেফতার হয়নি। ওই ঘটনায় বাকি দুই অভিযুক্ত হলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের রাম বাউরি, দলের কর্মী লক্ষ্মণ বাউরি।

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ওই ছবিই প্রমাণ করে অভিযুক্তের সঙ্গে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা। প্রভাবশালী যোগ থাকলে পুলিশ কি গ্রেফতারের সাহস দেখাবে? অথচ ওরাই খাতড়াকে অশান্ত করছে। এই ছবিই প্রমাণ দুষ্কৃতীদের মাথায় কার হাত।’’

অভিযোগ উড়িয়ে মন্ত্রী জ্যোৎস্না দাবি করেন, ‘‘ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে সে দিন অনেকেই কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাঁদের মতোই ওঁকেও ফোঁটা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে দলীয় বা ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি কী বলে বেড়াচ্ছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’

দুবৃত্তদের দাপাদাপি মানা যাচ্ছে না বলে তৃণমূলেরই একাংশ নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। কয়েক মাস আগে দলের কর্মীদের হাতেই মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তৃণমূলের খাতড়া ব্লক সভাপতি সুব্রত মহাপাত্র। দুবৃত্তেরা জ্যোৎস্নার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছিল। যদিও জ্যোৎস্না তা মানেননি।

তবে লোকসভা ভোটের আগে ব্যবসায়ী ও তাঁর কর্মীকে মারধরের ঘটনায় দলের পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন।

তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘‘এলাকায় কোনও দাদাগিরি বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement