ভস্মীভূত: বড়জোড়ার চাঁদাইয়ে বিজেপির সেই পার্টি অফিস। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় হাইমাদ্রাসার পরিচালন কমিটির নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। এরই মধ্যে বিজেপির পার্টি অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অশান্তি শুরু হল বাঁকুড়ার বড়জোড়ার চাঁদাই গ্রামে। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপির বেশ কিছু কর্মী জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশের গাড়িও।
বিজেপির দাবি, তাদের চাঁদাই এলাকার বুথ সভাপতি আলি হোসেন মল্লিককে গ্রামের ভিতরেই তৃণমূলের লোকজন রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় তাঁর মোটরবাইকে। জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির মারে জখম হয়েছেন সোনামুখীর পিয়ারবেড়িয়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী নিজাম শেখ, শেখ আলি ও চাঁদাইয়ের তৃণমূল কর্মী জিয়াউল মল্লিক। নিজামকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। অন্য দু’জন বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আগামী রবিবার চাঁদাইয়ের বারোহাজারি সম্মিলনী হাইমাদ্রাসার পরিচালন কমিটির নির্বাচন রয়েছে। মোট আসন ছ’টি। সব ক’টিতেই দ্বিমুখী লড়াই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল। মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। কিন্তু বিজেপি প্রার্থীরা সরে দাঁড়াননি।
বিজেপির বড়জোড়া ৩ নম্বর মণ্ডলের সম্পাদক ধনঞ্জয় বড়ুর অভিযোগ, বুধবার রাত ২টো নাগাদ চাঁদাইয়ে বিজেপির পার্টি অফিসে চড়াও হয় কিছু দুষ্কৃতী। বোমাবাজি করে খড়ের চালায় অগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভোরে স্থানীয় কিছু লোকজন দেখেন, পার্টি অফিস পুড়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে বিজেপির কর্মীরা গ্রামে জড়ো হন।
ধনঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, “অশান্তি করার মতলবে তৃণমূল বাইরে থেকে দুষ্কৃতী নিয়ে এসেছে। ওদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। ওরাই বোমা মেরে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। আমাদের বুথ সভাপতিকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই গ্রামের রাস্তায় মারধর করে।” তাঁর আরও অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা চাঁদাই গ্রামে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ও দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বড়জোড়ায় বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়ক অবরোধও করে বিজেপি।
তৃণমূল যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় ও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের উপরে দোষ চাপাতে ষড়যন্ত্র করে বিজেপি কর্মীরাই নিজেদের পার্টি অফিসে আগুন দিয়েছেন। অভিযোগ, পিয়ারবেড়িয়া থেকে বড়জোড়ার বাজারে যাওয়ার সময়ে তৃণমূল কর্মী নিজাম শেখ ও শেখ আলিকে চাঁদাই গ্রামের রাস্তায় মারধর করা হয়েছে। বাড়ি থেকে বার করে হামলা চালানো হয় চাঁদাইয়ের তৃণমূল কর্মী জিয়াউল মল্লিকের উপরে।
উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে গ্রামে পুলিশ যায়। পুলিশের একটি গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের বিশাল একটি দল গ্রামে যায়। গ্রামে টহল চলছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল সাঁতরা দাবি করেন, “চাঁদাই এলাকায় গত লোকসভা নির্বাচনে আমরা ভাল ফল করেছি। মাদ্রাসার নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনেই এলাকায় অশান্তি ছড়াতে বিজেপি নিজেরাই নিজেদের অফিসে আগুন লাগিয়ে আমাদের নামে দোষ চাপাচ্ছে।”
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহারের বক্তব্য, “নিজের ঘরে কেউ আগুন দেয় না। ওই এলাকায় আমাদের সংগঠন মজবুত। তাই মাদ্রাসার নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনেই সন্ত্রাসের রাস্তা ধরেছে তৃণমূল।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “চাঁদাই গ্রামের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে। এর জন্য পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করবে।”