দেওয়াল লিখছেন বিজেপি প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র।
ভোটের আগে বিভিন্ন জনসভা, কর্মী সম্মেলন থেকে বিজেপির রাজ্য নেতারা এলাকায় দাঁড়িয়ে থেকে পঞ্চায়েতে মনোনয়ন করানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে কার্যক্ষেত্রে কাউকে দেখা যায়নি। বাঁকুড়ার ইন্দাস, পাত্রসায়র, জয়পুর ও কোতুলপুর ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে একজনও পদ্ম প্রার্থী না থাকায় তাই প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। প্রশ্নের মুখে বিজেপির শক্ত ‘ঘাঁটি’ বলে পরিচিত বিষ্ণুপুর মহকুমায় দলের সাংগঠনিক শক্তিও।
বাঁকুড়া জেলায় বিজেপির ৭ জন বিধায়ক ও দু’জন সাংসদ। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও রয়েছেন। সেই জেলায় চারটি ব্লকে পঞ্চায়েতের দুই স্তরে বিজেপির প্রার্থী দিতে না পারা ঘিরে তাই চর্চা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ক’দিন আগেও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-রা প্রতিটি আসনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। মনোনয়ন-পর্বে সৌমিত্র নানা ব্লকে কর্মীদের পাশে থাকলেও শুভেন্দু জেলায় আসেননি। দলের জেলা কমিটির এক সদস্যের আক্ষেপ, “নেতারা যে ভাবে ভোটের আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তেমন তো কিছুইহল না। সন্ত্রাস-কবলিত ব্লকগুলিতে নিচুতলার কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লেগেছে।”
এ বার মনোনয়ন ঘিরে বিক্ষিপ্ত গোলমাল হয়েছে ওই চার ব্লকে। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, জয়পুর, কোতুলপুর ও পাত্রসায়র ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। ইন্দাসের একটি মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে মনোনয়ন হয়েছে। অথচ ওই ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতিতে ৭টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৬টি আসনে সিপিএম মনোনয়ন দিয়েছে।
তবে প্রশাসনিক তথ্যে জয়পুরে পঞ্চায়েত সমিতিতে এক জন সিপিএম প্রার্থী রয়েছেন বলে উল্লেখ থাকলেও দল তা মানেনি। জেলা সম্পাদক অজিত পতি জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
চার ব্লকে গেরুয়া মনোনয়নের ছবিটা অবশ্য গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের নিরিখে বিজেপির শক্ত ‘ঘাঁটি’ বিষ্ণপুর মহকুমায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে সামনে আনছে, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে সৌমিত্রের দাবি, “সাংগঠনিক ব্যর্থতা নয়, বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের আটকেছে। আমরা এখানে ভাঙড়ের মতো অশান্তি চাইনি। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হলে ওই সব এলাকার জেলা পরিষদ আসনগুলিতে তৃণমূলকে হারিয়ে দেখাব।”
তিনি জুড়ছেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাড়ে ৩ শতাংশ এলাকায় আমরা লড়েছিলাম। এ বারে ৭২ শতাংশের বেশি জায়গায় লড়ছি।”
তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “বিজেপি, সিপিএমের হয়ে মানুষ ভোটে লড়তেই চাইছেন না। তাই এই হাল।”
পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি জেলা পুলিশের এক কর্তারও।