কালোসোনা মণ্ডল।
জেলা বিজেপি-তে খানিক ‘কোণঠাসা’ হয়ে দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পরে ‘আদি-নব্য’ দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ উস্কে দলকে আবার বিড়ম্বনায় ফেললেন কালোসোনা মণ্ডল। সমাজমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব যদি ‘আদর্শবান কার্যকর্তাদের’ প্রতি বিশ্বাস রাখতেন, তা হলে গত বিধানসভা নির্বাচনে দল ২০০ আসন পার হয়ে যেত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য পরে ধরে রাখা যায়নি দলবদলুদের কারণে বলেও তিনি দাবি করেছেন।
একটা সময়ে বীরভূম জেলা বিজেপির অন্যতম দাপুটে ‘মুখ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন কালোসোনা। তাঁর ‘আগুনে’ বক্তৃতা নানা সময়ে যেমন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তেমনই হাততালি কুড়িয়েছে দলের কর্মী-সমর্থকদের। এ হেন কালোসোনাকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ ২০২০ সালে বহিষ্কার করেন বিজেপি নেতৃত্ব। ২০২১-এ তাঁকে দল আবার ফিরিয়ে নিলেও জেলার সাধারণ সম্পাদকের পদ খুইয়ে এখন তিনি এক জন কর্মী মাত্র। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে বিজেপি-তে যোগদান করানো নিয়ে জেলায় যাঁরা তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন, কালোসোনা তাঁদের অন্যতম।
প্রসঙ্গত, ২৭ মে সিউড়িতে দলের জেলা কার্যালয়ে এক সাংগঠনিক বৈঠকে এসে পুরনো কর্মীদের খোঁজখবর নেন বিজেপি-র রাজ্য় সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে লকেটের সঙ্গে কথা হয় কালোসোনার। তার পরে পরেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে ‘ক্ষোভের বিস্ফোরণ’!
সেখানে কালোসোনা লিখেছেন, ‘২০১৬ সালে বাংলায় বিজেপির উত্থান দলের আদর্শবান কার্যকর্তাদের প্রচেষ্টায়। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে দলের পতন শুরু হয়।’ তিনি নাম না করে তৃণমূল থেকে আগত নেতাদের আক্রমণ করে বলেছেন, ‘২০১৮-র পরে অন্য দল থেকে পাইকারি হারে আদর্শহীন অ-বিজেপি লোকদের বিজেপিতে যোগদান করানো শুরু হয় এবং তাঁদের জেলা ও কেন্দ্রে উঁচু উঁচু পদ দেওয়া হয়। ২০১৯-এ লোকসভার অসামান্য ফল নেপোর দই মারার কায়দায় এই সব নেতা মেরে দেয়! যেখানে জেতার মূল কারিগর ছিলেন দলের একনিষ্ঠ আদর্শ কর্মীর।’ তাঁর কটাক্ষ, ‘পিটুলি গোলা জলকে দুধ বলে চালিয়ে বিজেপির ক্ষতি করে যাদের জীবনেও জেতার মুরোদ ছিল না, তাদের কেউ বিজেপির দয়ায় সাংসদ, বিধায়ক হয়ে আবার তাদের পুরোনো দলে ফিরে গেল।’
এই পোস্ট ঘিরে বিজেপি-র অন্দরে এখন বিস্তর চর্চা। কালোসোনা-ঘনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীদের দাবি, এখনও দলে এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা দলে থেকে দলের ক্ষতি করছেন। এবং ওই দলবদলুদের জন্য পুরনো বিজেপি কর্মীরা দল থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। অনেকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশও নিচ্ছেন না। এর ফলেই, জেলায় সংগঠনের এমন হাল।
কালোসোনার এই পোস্ট দলের অস্বস্তি যথেষ্ট বাড়িয়েছে। এই নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি বিজেপি-র বীরভূম সাগংঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। কারণ, আমি এ রকম কোনও পোস্ট এখনও দেখে উঠতে পারিনি। তাই যা বলার কালোসোনা মণ্ডলই বলতে পারবেন।’’ কালোসোনা অবশ্য নিজের বক্তব্যে অনড়। তিনি বলছেন, ‘‘বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে এসে অনেকে পদ নিয়েছেন। আর সময়ের সঙ্গে দলের সংগঠন নষ্ট করে পুনরায় নিজের দলে ফিরে যাচ্ছেন। আমার মনে হয় এখনই জেলা বিজেপিতে শুদ্ধিকরণ প্রয়োজন। না হলে বিজেপির ফলাফল কখনও ভাল হবে না।’’