কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে জেলা ভাগের ঘোষণায় জেলাবাসীর আবেগও ভাগ হয়ে গিয়েছিল। বিষ্ণুপুরের পৃথক জেলা হওয়ায় আশায় এক দিকে যেমন মিষ্টি বিতরণ থেকে মানুষের শুভেচ্ছা মিছিল হতে দেখা গিয়েছিল, তেমনই বাঁকুড়া শহরে জেলা ভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘বাঁকুড়া ভঙ্গ প্রতিরোধ মঞ্চ’ গড়ে শুরু হয়েছিল পাল্টা আন্দোলন। তবে বৃহস্পতিবার নদিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করার ঘোষণার পরে নানা প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে জেলারবিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
প্রশাসন সূত্রে দাবি, ১ অগস্ট জেলা ভাগের কথা ঘোষণা করা হলেও রাজ্যের তরফে এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে বিষ্ণুপুর পৃথক জেলা হলে কোথায় হবে জেলাশাসকের কার্যালয়, তার জমি চিহ্নিত করার ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছিল প্রশাসনের অন্দরে। বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া কয়েকটি এলাকা প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। প্রশাসনের একাংশের অনুমান ছিল আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্য হয়তো জেলা ভাগ নিয়ে চূড়ান্ত কোনও নির্দেশিকা পাঠাতে পারে। তবে এমনটা যে হচ্ছে না বৃহস্পতিবারই প্রশাসনিক কর্তারা নিশ্চিত হয়ে যান।
এ দিকে, জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ার পরে সমাজ-মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে জেলা ভাগ না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করছেন, তো অনেকে আবার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বিশেষত, বিষ্ণুপুর শহরের মানুষজনের অনেকেই এই সিদ্ধান্তে হতাশ। বিষ্ণুপুর মহকুমার আওতায় পড়া পাত্রসায়র, ইন্দাস, কোতুলপুরের মতো প্রান্তিক ব্লকগুলির মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবি, বাঁকুড়া শহর অপেক্ষাকৃত দূরে হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সমস্যা হয়। নতুন জেলার সিদ্ধান্তকে তাই স্বাগতজানিয়েছিলেন তাঁরা।
তবে বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পরে কোতুলপুরের ননগর গ্রামের বাসিন্দা সাহিত্যকর্মী লক্ষ্মীকান্ত পাল বলেন, “ভেবেছিলাম জীবনের শেষ সময়ে একটু শান্তি পাব। বিষ্ণুপুর জেলার বাসিন্দা হয়ে কিছু কাজকর্ম করারও ইচ্ছে ছিল। সাধারণ মানুষের পরিশ্রমও অনেকটা লাঘব হত। জেলা ভাগ হচ্ছে না শুনে আমরা মর্মাহত।” বিষ্ণুপুরের শিক্ষক প্রবীর দত্তও বলেন, “খুব আশা করেছিলাম মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর, টেরাকোটার শহর বিষ্ণুপুর, ধ্রুপদ সঙ্গীতের ঘরানা বিষ্ণুপুর জেলা হবে। একাধিক প্রশাসনিক ভবন হবে। নতুন সাজে সেজে উঠবে শহর। কাজ ফেলে সাধারণ মানুষকে দৌড়তে হবে না বাঁকুড়ায়। সব আশা এলোমেলো হয়ে গেল।” যদিও আগামী দিনে বিষ্ণুপুর জেলা গড়ার দাবিতে জোরদার আন্দোলনের কথা বলছেন অনেকে। এ দিকে, ‘বাঁকুড়া ভঙ্গ প্রতিরোধ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক মধুসূদন দরিপা বলেন, “জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। আগামী দিনে খুব প্রয়োজন না হলে এই সিদ্ধান্ত বদল না করার আর্জি জানাচ্ছি।”
এর আগে, জেলা ভাগের ঘোষণার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। পাল্টা বিরোধিতা করতো দেখা গিয়েছিল বিরোধীদের তরফে। তবে সেই ঘোষণা স্থগিত হওয়ার পরে অস্বস্তি দানা বেঁধেছে তৃণমূলের অন্দরে। পাল্টা প্রশ্ন তুলে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে ভালবাসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে কেবল খামখেয়ালিপনা চলছে। মুখে যা আসছে তাই বলে চমক দেওয়ার চেষ্টা করছেন নেত্রী।” তাঁর সংযোজন, “বিষ্ণুপুরে বিশ্বমানের স্টেডিয়াম গড়ার কথা ছিল। তা হল কই? এ সবের জবাব মানুষই দেবেন।”
তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়ের তবে বক্তব্য, “কে বলছে যে বিষ্ণুপুর জেলা হবে না? এই মুহূর্তে পৃথক জেলার পরিকাঠামো ও প্রয়োজনীয় কার্যালয় না থাকায় জেলা হচ্ছে না। তবে মুখ্যমন্ত্রী যখন এক বার বলেছেন, তা হবেই। উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠতে একটু সময় দিতে হবে। এ নিয়ে অযথা রাজনীতির কোনও মানে হয় না।”