ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে কথা বলতে উদ্গ্রীব বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরের তেজপালে। নিজস্ব চিত্র
বাসিন্দাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। ভাঙা কালভার্টের পাশে তৈরি কাঠের সাঁকো ভাসিয়ে নিয়ে গেল যমুনাবাঁধের জল। কচুরিপানায় ফের চাপা পড়ল বিঘার পরে বিঘা ধান জমি।
বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের তেজপাল এলাকায় যমুনাবাঁধ থেকে কচুরিপানা ও আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করে ‘যমুনাবাঁধ উন্নয়ন কমিটি’। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাতেই নতুন করে বিপত্তি দেখা দেয় তেজপাল-সহ আশপাশের এলাকায়।
অস্থায়ী কাঠের সাঁকোতে আটকে যায় আবর্জনা। পাশের রাস্তা ভেসে গিয়ে বাঁধের জল ঢুকে পড়ে একাধিক মাটির বাড়িতে। ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে বাসিন্দারা নেমে পড়ে মাটি ও বালির বস্তা ফেলে জল আটকানোর চেষ্টাও করেন। কিন্তু লাভ হয়নি।
দিন চারেক আগে ভারী বৃষ্টিতে যমুনাবাঁধ উপছে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল তেজপাল এলাকা। কালভার্টের পাইপ পানায় বুজে যাওয়ায় রাতেই যন্ত্র দিয়ে রাস্তা কেটে জল সরানো হয়। তাতে ওই এলাকায় মাটির বাড়িগুলি জলমগ্ন হওয়া থেকে রক্ষা পেলেও চাষের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সেখানে জমা হয় পানা। রাস্তা কাটায় তেজপাল বাউরিপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি কাঠের অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করা হয়। তবে বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ফের যমুনাবাঁধের জল বাড়লেই সাঁকো ভেঙে যাবে। তাঁরা স্থায়ী সেতুর দাবি তুলেছিলেন।
যমুনাবাঁধের অতিরিক্ত জল একটি বড় নালা হয়ে তেজপাল এলাকা দিয়ে বিড়াই নদীতে পড়ে। এ দিন ‘যমুনা বাঁধ উন্নয়ন কমিটি’ বাঁধের পানা পাড়ে না তুলে ওই নালায় ভাসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। সেই পানার স্তূপ আটকে যায় তেজপালের অস্থায়ী সাঁকোতে। জল উপচে ঢুকে পড়ে পাশের কিছু মাটির বাড়িতে। পরে জলের তোড়ে ভেসে যায় কাঠের সাঁকো।
স্থানীয় বাসিন্দা মানসী দে , মিঠুন ঘোষ, বিশ্বনাথ বাউরি, তরুণ বাউরিদের দাবি, ‘‘তেজপালের মানুষ জলে ডুবছে আর এই সময়েই যমুনাবাঁধ পরিষ্কারে নামতে হল? কিছু দিন পরে পরিষ্কার করা হলে ডুবতে হত না আমাদের। ঘরদোর কে মেরামত করে দেবে? সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় আমরা যাতায়াতই বা করব কী করে?’’
অভিযোগ, জলে ভেসে পানা গিয়ে পড়েছে পাশের কুস্তরা, কেলেমেলে ও চুড়ামণিপুর মৌজার কয়েকশো বিঘা ধান জমিতে। হিমাংশু দে , তপন গঙ্গোপাধ্যায়, মথুরচন্দ্র ধীবর, অরূপ পাল প্রমুখ চাষির ক্ষোভ, ‘‘দুর্মূল্যের বাজারে কষ্ট করে ধান লাগিয়েছিলাম। এখন মাঠ জুড়ে শুধুই কচুরিপানা। কে এর ক্ষতিপূরণ করবে?’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বিষ্ণুপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সোমনাথ পাল। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি দেখেছি। স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগও শুনেছি। মহকুমাশাসককে রিপোর্ট জমা দেব।”
‘যমুনাবাঁধ উন্নয়ন কমিটি’-র সম্পাদক হিরালাল দত্ত বলেন, “যমুনাবাঁধ আমাদের গর্ব। তা পরিষ্কার না করায় দূষণ ছড়াচ্ছে। যমুনাবাঁধের চেকড্যামটি অকেজো বলেই এই দশা। সেই সঙ্গে তেজপাল বাউরিপাড়া ও লোহারপাড়ার মাঝে সেতু করার দরকার ছিল। কালভার্ট বা সাঁকো দিয়ে জল বার হওয়ার কথা নয়। সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা বাঁধ সংস্কারে নেমেছি।”
তিনি আরও জানান, পানা পাড়ে তুলে অন্যত্র সরানোর জন্য প্রচুর খরচ হবে। সে কারণেই নালায় ফেলা হয়েছিল। সেতু করে দিলে তবেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “খবর পেয়েই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। সাধারণ মানুষের অসুবিধা দূর করতে পুরপ্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’