Anubrata Mondal

ফের জেলায় ‘কেষ্টদা’, চনমনে তৃণমূল কর্মীরা

আপাতত খুশি দলের নেতাকর্মীরা। প্রথমত, নেতার দিল্লি যাওয়া আটকেছে। দ্বিতীয়ত, পুলিশ হেফাজতে থাকলেও চারমাস পর কেষ্টদা জেলায় ফিরে আসায় নেতাকর্মীরা দৃশ্যতই চনমনে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩০
Share:

অনুগামী: ‘কেষ্টদা’র ছবি বুকে সেঁটে আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

তাঁর অভিযোগ, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে দলের জেলা সভাপতি তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছিলেন। তার দেড় বছর পর সেই অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেন দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল।

Advertisement

কেন এতদিন পর লিখিত অভিযোগ করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। চর্চা চলছে, কেষ্টকে বাঁচাতে কি এগিয়ে এলেন শিবঠাকুর? কত দিন সেটা আটকানো যাবে সেটা সময় বলবে। তবে আপাতত খুশি দলের নেতাকর্মীরা। প্রথমত, নেতার দিল্লি যাওয়া আটকেছে। দ্বিতীয়ত, পুলিশ হেফাজতে থাকলেও চারমাস পর কেষ্টদা জেলায় ফিরে আসায় নেতাকর্মীরা দৃশ্যতই চনমনে।

এ দিন অনুব্রতকে দুবরাজপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। তখনও থানার বাইরে ভিড় করেন দলের কর্মীরা। সকালে দুবরাজপুর আদালত চত্বরে প্রিয় কেষ্টদার একাধিক ছবি বুকে সেঁটে হাজির হন এক কর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু দুবরাজপুর থানায় মধ্যেই অনুব্রতকে রাখা হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও নজরদার ক্যামেরা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, থানায় অনুব্রতর জন্য দুটি নজর ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলবে। সরকারি কৌঁসুলি ছাড়া আর কেউ অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পুলিশ।

Advertisement

২০১৩ সালে নির্বাচনে জিতে বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে যোগদান করেন শিবঠাকুর মণ্ডল। কিন্তু তিনি তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। দলের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। দলের হস্তক্ষেপে সেই সময় অনাস্থা আটকানো গেলেও ২০১৫ সালে দলের বাকি নির্বাচিত সদস্যদের শান্ত করতে শিবঠাকুরকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়। তখন চূড়ান্ত সংঘাত হয়েছিল ব্লক সভাপতির সঙ্গে।

দুবরাজপুরের ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র শিবঠাকুরকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। কিন্তু বছর দুই যেতে না যেতেই সেই বহিষ্কৃত শিবঠাকুরকেই বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করা হয়। কারণ তখন যে সব পঞ্চায়েত সদস্যরা তাঁর বিপক্ষে ছিলেন তাঁরা তাঁকে সমর্থন করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধানের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ার শিবঠাকুর চর্চা থেকে হারিয়ে যান।

যদিও শিবের দাবি, ‘‘২০১৮ সালে পঞ্চায়েতের ৫টি আসন দলের কাছে দাবি করেছিলাম। তার পরিবর্তে ২টি আসল চাইলে সংঘাত বাড়ে। শেষ পর্যন্ত দলের কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিই। ২০২১-এ বিধানসভা ভোটের আগে সেই আক্ষেপ থেকে অন্য দলে যাওয়ার ভাবনা বা পুরো বসে যাওয়ার কথা মাথায় ঘুরছিল। তখনই ঘটনাটি ঘটে।’’ এ দিন শিবঠাকুর দাবি করেন, ‘‘আমি বিচার চেয়েছি। দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’’

তবে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া নিয়ে ইডির তোড়জোড়, আর সে দিনই শিবঠাকুরের থানায় অভিযোগের ‘সমাপতন’ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির। তাদের দাবি, দেড় বছর আগের ঘটনায় বেছে বেছে ১৯ ডিসেম্বরই অভিযোগ জানানোর ঘটনায় স্পষ্ট যে, সব পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে। তা ছাড়া, খাস বীরভূম জেলায় কোনও তৃণমূল কর্মী কেষ্টর বিরুদ্ধে নালিশ জানানোর ‘হিম্মত’ পেলেন কোথা থেকে, তা নিয়েও বিরোধীদের প্রশ্ন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করলে অনেক রাঘব বোয়াল ফাঁসতে পারে। তাই ওঁকে এখানে আটকে রাখার মরিয়া চেষ্টা।’’ দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহার দাবি, ‘‘অনুব্রতের তিহাড় যাত্রা আটকাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসাজস হয়েছে। তবে বিলম্বিত হলেও ওঁর তিহাড় যাত্রা আটকানো যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement