বোলপুর তৃণমূল কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অভিজিৎ সিংহ ও বিকাশ রায়চৌধুরী রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়লে বা সেই প্রার্থীদের সমর্থনে কাজ করলে যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে তা আগেই জানিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায় কাজ না হওয়ায় রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এক সঙ্গে তৃণমূলের ৩০ জন কর্মীকে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা জানাল তৃণমূলর জেলা কোর কমিটি। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এক সঙ্গে এত জন কর্মীকে দল থেকে ছেঁটে ফেলায় ভোটে বেশ কিছু জায়গায় তার প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কটাক্ষ করেছে বিরোধীরাও। তবে তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলের তরফে ঠিক করে দেওয়া প্রার্থীকে কেউ মেনে না নিলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের বার্তা আগেই দিয়েছিলেন তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও দেখা যায় রাজ্য জুড়ে বহু আসনে ‘গোঁজ’ হয়ে দাঁড়ান টিকিট না পাওয়া তৃণমূল নেতানেত্রীরা। এ দিন বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁদেরই সাসপেনশনের কথা জানিয়ে দেন জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা বিকাশ রায়চৌধুরী ও লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দল বিরোধী কাজকর্মের জন্য জেলার ছ’টি ব্লক থেকে এদিন ৩০ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়। এর মধ্যে খয়রাশোল ব্লকেরই ১৯ জন রয়েছেন। মুরারই ব্লকের ৭ জন, সিউড়ি ১ ব্লক, রাজনগর, রামপুরহাট ২ ব্লক ও দুবরাজপুর ব্লকের ১ জন করে কর্মী রয়েছেন। সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে রয়েছেন রাজনগরের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান বামাপদ ঘোষ। তিনি ছাড়াও আরও কয়েক জন অনুব্রত ঘনিষ্ঠ কর্মী রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এই ৩০ জনের মধ্যে এ বার নির্দল প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েক জন নির্বাচনে লড়ছেন।
এ দিন বিকাশ বলেন, “এঁদের সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা অমান্য করায় দলের তরফে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আজ থেকে এঁদের দলের প্রতি কোন দায়-দায়িত্ব আমরা দিচ্ছি না।” নির্দল প্রার্থীরা যদি জয়ী হন তাহলে তাদের দলে ফেরানো হবে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে অভিজিৎ বলেন, “কোনও ভবিষ্যৎবাণীর দিকে আমরা যাব না। তবে এটুকু বলতে পারি দলের সঙ্গে তাঁদের আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। এই তালিকায় নতুন-পুরনো সব কর্মীই থাকতে পারেন, কিন্তু দলের শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে। কেউ নন।”
টিকিট না পাওয়ার জেরে যে ‘মন খারাপ’ স্বাভাবিক তা মেনেছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তা মেনেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলের প্রতি ভালবাসা থাকলে সব খারাপ লাগা সরিয়ে রেখে দলের মনোনীত প্রার্থীর হয়েই তাঁরা ভোট করাবেন। কিন্তু তা না করে কেউ যদি বিদ্রোহ করে নির্দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাহলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের সাসপেন্ড হতেই হবে।’’
দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া রাজনগর ব্লকের নির্দল প্রার্থী বামাপদ ঘোষ পাল্টা বলেন, “দলে থেকে যোগ্য সম্মান পাইনি, তাই দু'বছর আগেই দল থেকে সরে এসেছি।’’ সাসপেনশন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দল থেকে তো আগেই সরে গিয়েছি, মানুষ আমায় সমর্থন করায় এ বার নির্দলে দাঁড়িয়েছি।’’
এ নিয়ে কটাক্ষের সুরে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “এ সমস্ত সাসপেনশন লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষও একই সুরে বলেন, “যাঁদের সাসপেন্ড করা হল, তাঁরা নির্বাচনে জিতলে তাঁদেরই আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।”