Visva Bharati Student Kidnap

বিদেশি ছাত্রের অপহরণ কাণ্ডে জমা চার্জশিট

ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন রাতে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বোলপুর থানায় ই-মেল করে বিষয়টি জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বিশ্বভারতীর এক বিদেশি ছাত্র অপহরণের ঘটনার ৫০ দিনের মাথায় বোলপুর আদালতে অভিযুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল বীরভূম জেলা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৬৫ (অপহরণ), ৪৪৮ (অবৈধ প্রবেশ), ৩২৩ (মারধর), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ১২০ বি (যড়যন্ত্র), ৩৯৫ (ডাকাতি) এবং আরও কয়েকটি ধারায় রবিবার চার্জশিট দাখিল হয়েছে। ওই ঘটনায় ধৃতেরা এখন আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ চার্জশিটে দাবি করেছে, অপহরণের পরে তারা ওই ছাত্রের থেকে ৫১ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২১ সেপ্টেম্বর। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন রাতে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বোলপুর থানায় ই-মেল করে বিষয়টি জানান। বোলপুরের ইন্দিরাপল্লি এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে সহপাঠীর সঙ্গে থাকতেন মায়ানমারের বাসিন্দা বিশ্বভারতীর ভাষাভবনের এক ছাত্র। ওই সহপাঠী তাঁদের বিভাগীয় প্রধানকে জানিয়েছিলেন, সে দিন মায়ানমারের ওই ছাত্রকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছে সাত যুবক। অপহরণকারীরা দুই পড়ুয়ারই মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছিল। ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তদন্তকারীরা। এলাকার বাসিন্দারা বুঝতে পারেননি, যারা ওই ছাত্রটির খোঁজে এসেছিল, তারা আসলে অপহরণকারী।

ঘটনার দু’দিনের মাথায় বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে ওড়িশার তালসারি সমুদ্র সৈকত থেকে অপহৃতকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ১২ জনকে। তাদের মধ্যে আট জন পূর্ব মেদিনীপুরের ও চার জন বীরভূমের বাসিন্দা। ধৃতেরা আন্তর্জাতিক চুল পাচার কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি পুলিশের। বস্তুত, এ রাজ্যেও যে চুল বিক্রির কোটি টাকার কারবার চলে এবং সে কারবারের সঙ্গে যোগ রয়েছে বীরভূমের তা প্রকাশ্যে এসেছিল বিশ্বভারতীয় বিদেশি পড়ুয়াকে ‘অপহরণের’ পরেই। এই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটি একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ৫০ দিনের মাথায় পুলিশের চার্জশিট জমা দেওয়া প্রশংসনীয় কাজ।”

Advertisement

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অভিযুক্তেরা ওই ছাত্রকে প্রথমে তমলুকের একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাঁর থেকে ৫১ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। জোর করে তাঁকে একটি ‘ইনভয়েসে’ সই করানো হয়। একটি ভিডিয়ো-ও বানানো হয়েছিল তাঁকে দিয়ে। তাতে ওই ছাত্রকে দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাঁর ৫১ লক্ষ টাকা ধার রয়েছে। টাকা চেয়ে পরিচিত কয়েক জনকে ফোন করানো হয় ওই ছাত্রকে দিয়ে। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তালসারির সমুদ্র সৈকতে। ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। ধরা পড়ে ১২ জন। আদালতে তারা জামিনের আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ১২ জনের মধ্যে এক জন নিজেকে প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দিয়ে অপহৃতকে হুমকি দিয়েছিল। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত চলাকালীন উদ্ধার হয়েছে অপহৃতকে যে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটি, এবং তাঁর এবং তাঁর সহপাঠীর মোবাইল ফোন। এ ছাড়া, আরও কয়েকটি ফোন, সিমকার্ড, পেন ড্রাইভ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু জায়গার ভিডিয়ো ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ধৃতদের এবং উদ্ধার হওয়া গাড়িটির শনাক্তকরণ হয়েছে। আদালতে অপহৃত ছাত্র-সহ পাঁচ জনের জবানবন্দি নথিভুক্ত করিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই মামলার মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬১। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে পুলিশ ও আইনজীবীদের সূত্রে খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement