Coronavirus

‘একলা বৈশাখ কাটালাম’

রোজকার মতোই এ দিনও সকালে বাজার এলাকায় খাদ্যপণ্য কিনতে মানুষজনের ইতিউতি ভিড় নজরে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৪
Share:

দূরত্ব রেখে, মুখে কাপড় ও ‘মাস্ক’ ঢেকে চলছে পুজোপাঠ। বিষ্ণুপুরের শাঁখারিবাজারে। মঙ্গলবার। ছবি: শুভ্র মিত্র

হালখাতা হাতে নিয়ে মন্দিরে ছুটছেন দোকানদারেরা। বিকেল থেকে পথে ভিড় লোকজনের। নববর্ষের এই চেনা ছবি—এ বার উধাও। ‘লকডাউন’-এ থাকা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার সর্বত্রই এ বার নীরবেই কেটে গেল বাংলা নববর্ষ। নতুন ক্যালেন্ডার হাতে পাওয়ার উচ্ছাস নেই, পঞ্জিকা হাতে নিয়ে বয়স্কদের এক মনে নাড়াচাড়া করাও নেই। করোনাভাইরাসের ভয়ে ‘গৃহবন্দি’ দুই জেলা এ বার ‘মনমরা’ নববর্ষ পালন করল। পাড়ায়-পাড়ায় সকালে প্রভাতফেরি, সন্ধ্যায় মঞ্চ বেঁধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সব উধাও।

Advertisement

রোজকার মতোই এ দিনও সকালে বাজার এলাকায় খাদ্যপণ্য কিনতে মানুষজনের ইতিউতি ভিড় নজরে এসেছে। বেলা বাড়তেই ফের সুনসান রাস্তা।

কিছু জটলা দেখা গেলেও মানুষের মধ্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। বরং সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধির ঘোষণা শুনে তা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে মানুষজনকে।

Advertisement

এ বার বাংলা নববর্ষ ও অক্ষয় তৃতীয়া লকডাউনের মধ্যেই পড়েছে। ফলে, হালখাতা করানো যাবে না বলে আক্ষেপ শোনা গিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর মুখে। পুরুলিয়া জেলার ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়িতেই পুজো সেরেছেন। কেউ কেউ মন্দিরে গিয়েছেন।

বাঁকুড়া শহরের কিছু ব্যবসায়ী খুবই অনাড়ম্বর ভাবে মহামায়া মন্দিরের ঘটে হালখাতা ছুঁইয়ে নিয়ম রক্ষা করেছেন। বিষ্ণুপুর শহরের রসিকগঞ্জের রক্ষাকালী মন্দিরে, শাঁখারিবাজারের মন্দিরে কিছু ব্যবসায়ী গিয়ে পুজো দেন। কিছু ব্যবসায়ী আবার দোকানের শাটার অর্ধেক তুলে পুজো সেরেছেন।

বাঁকুড়া চকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক করুণাময় চঁদ বলেন, “পয়লা বৈশাখে আমরা না দোকান খুলতে পারলাম, না পুজো করানো গেল। ব্যবসায়ী মহলই এতে হতাশ। তবে মারণ রোগ কোভিড ১৯-এর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে এ ছাড়া আর উপায় কী?’’

অভ্যাস বশে নববর্ষের দিন পঞ্জিকা হাতে না পাওয়ায় অনেকে হতাশ। হতাশ পঞ্জিকা বিক্রেতারও। বছরের প্রথম দিনে বাড়িতে পঞ্জিকা নিয়ে আসা অনেক কালের রীতি যে সমস্ত বাড়িতে, তেমন পরিবারের গৃহস্থকেও এ দিন বাজার থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

কাশীপুরের বাসিন্দা কিষনলাল সিংহ জানালেন, প্রতি বছরের পঞ্জিকা তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। এ বার খোঁজ করে কোথাও তিনি পঞ্জিকা পাননি।

ঝালদার বাসিন্দা পেশায় পুরোহিত শঙ্কু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পঞ্জিকা ছাড়া, পয়লা বৈশাখ, ভাবাই যাচ্ছে না। পেশার জন্য পঞ্জিকা প্রয়োজন। কিন্তু পাচ্ছি না।’’

পুরুলিয়া শহরের কর্পূরবাগানের বাসিন্দা পারুল গুপ্ত বলেন, ‘‘বরাবর পয়লা বৈশাখ বাড়িতে পঞ্জিকা আনা হয়। ব্যতিক্রম হয়নি। এ বার বাজার বন্ধ বলে পঞ্জিকা পেলাম না।’’

পয়লা বৈশাখের আগে থেকে পুরুলিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে-ঘুরে পঞ্জিকা বিক্রি করেন অনেকেই। তাঁদের অনেকে বলেন, ‘‘এ বার কাকে পঞ্জিকা বিক্রি করব? যে দোকান থেকে পঞ্জিকা নিই, সেটাও বন্ধ। আমাদেরও রোজগার ফাঁকা।’’

পুরুলিয়া শহরের সন্দেশগলির পঞ্জিকার পাইকারি বিক্রেতা দীপক যোশি জানান, ‘লকডাউন’-এর আগে হাতে গোনা অল্প পঞ্জিকা তিনি বিক্রি করেছিলেন। সাধারণত পয়লা বৈশাখের সপ্তাহ দুই আগে ব্লক থেকে খুচরো বিক্রেতারা পঞ্জিকা কিনতে আসতেন। এ বার গাড়ি বন্ধ থাকায় তাঁরা আসছেন না। এক ব্যাগ পঞ্জিকা এনেও তিনি বিক্রি করতে পারছেন না।

পুরুলিয়া শহরের এসসি সেন রোডের খুচরো বিক্রেতা অসীম কর, বাঁকুড়ার দশকর্মা ব্যবসায়ী তপন দে বলেন, ‘‘পরিচিতজনদের কেউ কেউ বাড়ি থেকে পঞ্জিকা নিয়ে গিয়েছেন।’’

সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুব্রত রাহার আক্ষেপ, ‘‘এ বার আমরা একলা বৈশাখ কাটালাম। ছোটবেলার ভুলটাই আজ কঠিন সত্যে পরিণত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement