Coronavirus

হালখাতা লাটে, হতাশ ব্যবসায়ীরা

গ্রামাঞ্চলের বড়ো সংখ্যক ক্রেতাই সারা বছর বিভিন্ন দোকান থেকে ধারে জিনিসপত্র কেনেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০২:১২
Share:

প্রতীকী ছবি

নিমন্ত্রণপত্র ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল অনেকের। ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানোর জন্য মিষ্টির দোকানে অর্ডারও দিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। কারও দোকানে নতুন বছরের ছাপানো ক্যালেন্ডারও এসে পৌঁছে গিয়েছিল। তারই মধ্যে আচমকা লকডাউন ঘোষণার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলে গিয়েছে দোকানে। হালখাতার মুখে কার্যত আকাশ ভেঙে পড়েছে ওইসব ব্যবসায়ীদের মাথায়। কী করে নিজেদের বকেয়া টাকা উদ্ধার করবেন, কী করেই বা মহাজনের ধার শোধ করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

Advertisement

গ্রামাঞ্চলের বড়ো সংখ্যক ক্রেতাই সারা বছর বিভিন্ন দোকান থেকে ধারে জিনিসপত্র কেনেন। তাদের ধারের হিসাব ‘খেরোর খাতা’ অর্থাৎ লালরঙের কাপড়ের মলাট দেওয়া একটি খাতায় লেখা থাকে। পয়লা বৈশাখে হালখাতায় ওইসব ক্রেতাদের নামে নিমন্ত্রণ পাঠান দোকানদারেরা। বাকি নেই এমন নিয়মিত ক্রেতারাও নিমন্ত্রণ পান। ক্রেতারা দোকানে এসে কেউ সারাবছরের বাকি পুরোপুরি, কেউ বা আংশিক মিটিয়ে দেন। বাকি যাঁদের নেই তাঁরাও সেদিন কিছু কেনাকাটা করেন বা নিমন্ত্রণের সম্মান রক্ষার্থে কিছু টাকা জমা দেন। ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বছরের ক্যালেন্ডার-সহ মিষ্টির প্যাকেট।

এই ছবিই পরিচিত ছিল জেলায়। এ বার লকডাউনে সব হিসেব উল্টে গিয়েছে। দোকানে তালা ঝুলে যাওয়ায় হালখাতার অনুষ্ঠানে লাটে উঠেছে। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া মোড়ে কাপড়ের দোকান রয়েছে আনন্দময় কোলের। তাঁর দোকানের হালখাতার কার্ড ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে। ক্যালেন্ডার ছাপা হয়ে চলে এসেছে। মিষ্টিরও অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে আনন্দবাবু স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে লকডাউনের জেরে সিউড়িতে মেয়ের বাড়িতে আটকে গিয়েছেন। লাভপুরের জুতো ব্যবসায়ী বিমল দাসের আক্ষেপ, ‘‘দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি। এমনিতে বকেয়া টাকা ৫০/৬০ শতাংশের বেশি আদায় হয় না। এ বারে লকডাউনের দোহাই দিয়ে সবাই এড়িয়ে যাবে। মাঝখান থেকে কার্ড, ক্যালেন্ডারের খরচ বৃথাই গেল। এখন মহাজনের দেনা মেটাব কী করে ভেবে পাচ্ছি না।’’

Advertisement

বিপাকে মিষ্টির ব্যবসায়ীরা, কারিগরেরাও। হালখাতার জন্য দোকান থেকে অর্ডার দিয়ে মিষ্টি কেনার পাশাপাশি বাড়িতে ভিয়েন বসিয়ে মিঠাই, জিলিপি, চমচম-সহ বিভিন্ন রকম মিষ্টি তৈরির চল রয়েছে। কিন্তু এ বার সবাইকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। কীর্ণাহারের মিষ্টি ব্যবসায়ী বুদ্ধদেব ঘোষ, ময়ূরেশ্বরের ডাঙ্গাপাড়ার মিষ্টির কারিগর আশিস ভল্লারা বলছেন, ‘‘অন্যবার হালখাতার মিষ্টি তৈরি করতে হিমশিম খেয়ে যাই। এ বারে হাতগুটিয়ে বসে থাকতে আছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement