অক্ষয় ভকত। নিজস্ব চিত্র।
খবরের কাগজের হকারি শুরু করায় ফিরেছিল সংসারের হাল। কিন্তু ভ্রমণের নেশায় আবার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমেছে ছেলে। এ বার লক্ষ্য সাইকেলে নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেওয়া। বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। এমনই পণ নিয়েছেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের বুড়দা গ্রামের যুবক অক্ষয় ভকত।
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন অক্ষয়। প্রকৃতিকে ভাল করে চিনতে ২০১৮ সালেও সাইকেল নিয়ে দেশের ২০টিরও বেশি রাজ্য ঘুরে বাড়িতে ফেরেন অক্ষয়। ২০২০ সালে কুলু মানালি হয়ে প্রথম সাইকেল আরোহী হিসাবে ভারতের উচ্চতম গিরিপথ উমলিংলা গিরিপথে হাজির হন তিনি। তবে দু’বছর যেতে না যেতেই ফের তাঁর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন অক্ষয়। এ বার আর দেশ না। দেশের সীমানা পেরিয়ে আফ্রিকা, দুই আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার দেড়শোটিরও বেশি দেশ ছুঁয়ে বিশ্বভ্রমণ করা। কিন্তু কেন এই সখ? পুরুলিয়া থেকে সাইকেলে চড়ে কলকাতা যাওয়ার পথে মঙ্গলবার অক্ষয় বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের অবস্থান বাঘমুন্ডি পাহাড়ের কোলে। ছোট থেকেই সবুজের মাঝে বড় হয়েছি। বড় হওয়ার পর দেখি আমাদের চারিদিকের জঙ্গল নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে অযোধ্যা, জয়চণ্ডী, শুশুনিয়ার মতো পাহাড়ে। খবরের কাগজ পড়ে দেখেছি আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে আমাজনের জঙ্গল। ফলে পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম এক বিষাক্ত পৃথিবী উপহার পাবে আমাদের কাছ থেকে। তা আমি চাইনা। আমি চাই আগামী প্রজন্ম আসুক এক সুন্দর নির্মল পৃথিবীতে। আর তাই আমার এই বিশ্বযাত্রা।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি এই যাত্রায় যে দেশেই যাব সেখানেই মানুষকে পরিবেশ বাঁচানোর আর্জি জানাব। পাশাপাশি প্রতিটি দেশে প্রতীক হিসাবে হিসাবে একটি করে চারা গাছ রোপণ করব।’’
তিন দিদির বিয়ে হওয়ার পর এখন মা, বাবা ও এক বোনকে নিয়ে মোট চার জনের সংসার অক্ষয়ের। বাবা ভুবনেশ্বর ভকত রাঁচির একটি হোটেলে সামান্য বেতনের কর্মচারী। সংসারের অভাব ঘোচাতে অক্ষয় বেছে খবরের কাগজের হকারি শুরু করেন। খবরের কাগজ ফেরি করার ফাঁকে প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুঁটিয়ে পড়া তাঁর অভ্যেস। সেই খবরের কাগজে পরিবেশ সংক্রান্ত নানান উদ্বেগজনক খবর পড়েই পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার বাসনা জাগে অক্ষয়ের।