ভিড়: শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার। এসডিও (পুরুলিয়া সদর) অফিসে শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের জন্য তৃণমূলের ৮৪ জন মনোনয়ন জমা করেছিলেন। শনিবার, প্রত্যাহারের শেষ দিনে দেখা গেল, ১০ জন গোঁজ রয়েই গিয়েছেন।
প্রথম দফার মনোনয়ন পর্বে জেলা পরিষদে তৃণমূলের হয়ে ৭৭ জন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে বাড়তি দিন দেওয়া হয়। তখন আরও ৭ জন অতিরিক্ত প্রার্থী এসে দাঁড়ান। দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো নির্দেশ দিয়েছিলেন গোঁজ প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে। কিন্তু গড়িমসি চলছিলই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রথম দু’দিনে কোনও গোঁজ প্রার্থীই সরেননি। অবশেষে রাজ্য নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করে। শুক্রবার রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন এবং মন্ত্রী শান্তিরামবাবু মিলে বিভিন্ন ব্লকের গোঁজ প্রার্থীদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন। পুরুলিয়া শহরের রাঁচী রোডে শান্তিরাম মাহাতোর কার্যালয়ে এবং সাহেববাঁধ রোডের একটি হোটেলে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলে আলোচনা। ফল অনেকটাই মিলেছে বলে মনে করছেন নিচুতলার কর্মীদের একাংশ।
পুরুলিয়া ২ ব্লকের একটি জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের সাতজন মনোনয়ন জমা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একাধিক বড় নেতা। শনিবার মনোনয়ন তুলে ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি আনন্দ রাজোয়াড় বলেন, ‘‘দলের কথা ভেবেই মনোনয়ন তুলে নিলাম।’’ একই বক্তব্য গত নির্বাচনে ওই আসনে নির্বাচিত নেত্রী পুষ্প বাউড়ির। বাড়তি দিনটিতে মনোনয়ন জমা করেছিলেন পুরুলিয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সমীরণ মুখোপাধ্যায়। এ দিন তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। অন্যদের প্রত্যাহারের তদারকও করেছেন। ওই ব্লকে এখন তৃণমূলের এক জনই প্রার্থী— জেলা পরিষদের বিদায়ী বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো।
হুড়ার একটি জেলা পরিষদ আসনে দলের প্রার্থী কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার পুত্র সৌমেন বেলথরিয়া। ওই আসনেই মনোনয়ন দিয়েছিলেন গত বারে নির্বাচিত অনিতা চক্রবর্তী এবং দলের হুড়া ব্লক সভাপতি শ্যামনারায়ণ মাহাতো। দু’জনেই মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন। বাঘমুণ্ডির একটি আসনে দলের ব্লক যুব সভাপতি শশীপ্রসাদ মাহাতো গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ দিন সরে গিয়েছেন তিনিও। বলেছেন, ‘‘শান্তনুবাবু ও জেলা সভাপতির অনুরোধেই নাম তুলে নিলাম।’’ জয়পুরের একটি আসনে শান্তিরাম মাহাতোর ভাইপো মেঘদূত মাহাতো-সহ তিন জন মনোনয়ন জমা করেছিলেন। শনিবার তাঁদের মধ্যে এক জন সরে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রতীক পেয়েছেন মেঘদূত। অন্য জন নির্দল হিসাবে লড়ছেন। কোটশিলার একটি আসন এবং আড়শার দু’টি আসনেও গোঁজ থেকে গিয়েছে।
রঘুনাথপুর মহকুমায় ১৪ জন গোঁজ প্রার্থীর মধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৩ জনই। শনিবার শেষ দিনে মনোনয়ন ফিরিয়ে নিয়েছেন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের তিন জন, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের দু’জন এবং পাড়া ব্লকের এক প্রার্থী। তবে সাঁতুড়ি ব্লকে এক জন গোঁজ রয়ে গিয়েছেন। তিনি তৃণমূলের সাঁতুড়ির বিদায়ী সদস্য বড়কারাম টুডুর স্ত্রী শ্রীদেবী টুডু। দলীয় প্রার্থী চৈতালী রায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন নির্দল হিসাবে।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকে জেলা পরিষদের ২টি আসনের দাবিদার ছিলেন তৃণমূলের ১২ জন। শুক্রবার তাঁদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন সাত জন। শনিবার অন্য তিন জনও সরে যান। ওই ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর দায়িত্ব ছিল রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে। তিনি কড়া ব্যবস্থার কথা বলেই এটা সম্ভব করছেন বলে মনে করছেন ব্লকের অনেক কর্মী।
পাড়া ব্লকের একটি আসনে বিক্ষুব্ধ প্রার্থী তথা সংখ্যালঘু নেতা রেয়াজ আহমেদ শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সূত্রের খবর, শান্তনুবাবুর কথাতে কাজ হয়েছে। তবে রেয়াজ বলছেন, ‘‘বিরোধীরা সুবিধা পেয়ে যাবে বুঝে ও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ থাকায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি।” মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের একটি আসনের গোঁজ প্রার্থী, দলের জেলার অন্যতম সহসভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানবাজার দুই ব্লকে জেলা পরিষদের ৩ নম্বর আসনে দলের জেলা মহিলা সভানেত্রী নিয়তি মাহাতোর বিরুদ্ধে গোঁজ হয়ে রয়ে গিয়েছেন তাঁর আত্মীয়া অঞ্জলি মাহাতো। অঞ্জলি বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি অঞ্চলের কর্মীরা সভা করে আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। তাঁদের দাবিকে মর্যাদা দিতে লড়াইয়ের ময়দানে রইলাম।’’ নিয়তি বলেন, ‘‘দলের প্রতীকে ভোট হয়। দল আমাকে যোগ্য মনে করেছে তাই লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছি।’’
বান্দোয়ানে বিধায়ক রাজীব সোরেনের স্ত্রী প্রতিমা সোরেনের বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে লড়াইয়ে থাকছেন কুইলাপাল অঞ্চলের তৃণমূলের প্রধান সনকা সোরেন। মানবাজারে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ধানাড়ার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি রবি সহিসের স্ত্রী দাঁড়িয়েছেন। মানবাজারের আর একটি জেলা পরিষদের আসনে মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী গুরুপদ টুডুর বিরুদ্ধেও গোঁজ প্রার্থী রয়েছেন।
শনিবার জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘বিক্ষুব্ধ হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁদের বেশির ভাগই নাম তুলে নিয়েছেন। দু’-একটি জায়গায় কেউ লড়াইয়ে থেকে যেতে পারেন। সমস্ত ছবিটা এখনও পরিস্কার হয়নি। তবে সমস্যার সিংহভাগই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আমাদের দলে প্রকৃত গণতন্ত্র রয়েছে। তাই সকলেই প্রার্থী হতে চেয়ে নিজেদের মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। আবার দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে মনোনয়ন তুলেও নিয়েছেন। তাঁদের কিছু বক্তব্য ছিল। আমি শুনেছি। যথাস্থানে জানাব।’’