রক্তাক্ত: মনোনয়নের প্রথম-পর্বে জখম হীরু লেট। ফাইল চিত্র
চার দিন আগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। মুখের ডান দিকের চোয়ালের আঘাত এখনও সারেনি। চোখে দেখতেও অসুবিধা হচ্ছে। ৫ এপ্রিলের পর এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। দিন কাটছে কলকাতার শ্রমিক ভবনে।
সেখান থেকেই নিজের এলাকার, গ্রামের খোঁজখবর নিচ্ছেন হীরু লেট। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দিতে এক দিন সময় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তা জেনে খুশি তিনি। বলেছেন, ‘‘দল যদি আবার কোনও বাধা প্রতিরোধের জন্য ডাকে, তা হলে ঝাঁপিয়ে পড়তে রাজি।’’
৫ এপ্রিল দুপুরে নলহাটি ১ ব্লক প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুষ্কৃতীদের লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন নলহাটি থানার ভগবতীপুর গ্রামের বছর পঞ্চাশের হীরুবাবু। অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দিকে। তাঁকে প্রথমে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। পরে সেখান থেকে কলকাতায়। তাঁর পরিজনদের অভিযোগ, ৬ এপ্রিল ভোরে এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত সেখানে তাঁকে ভর্তি করানো যায়নি। বিনা চিকিৎসায় প্রায় ৯ ঘণ্টা থাকার পরে মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
সিপিএমের নলহাটি থানা এলাকার গুনিয়া শাখার দীর্ঘদিনের সদস্য হীরুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘অনেক অল্প বয়স থেকেই লাল পতাকা হাতে ধরে রাজনীতি করছি। অনেক ঝড়-জল সামলেছি। কিন্তু এ ভাবে সম্মুখ-সমরে নামতে হবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দলের হাজার হাজার কর্মীর সঙ্গে নলহাটি ১ ব্লকের ব্লক অফিসে যাচ্ছিলাম। সেখানে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঢিল, লাঠি, বোমা, ধারাল অস্ত্র দিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে। প্রচণ্ড মারধরে জ্ঞান হারাই।’’ হীরুবাবুর মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রে হারজিৎ রয়েছেই। একনায়কতন্ত্র কায়েম করা হলে কেউ মেনে নেবেন না। আমি চাই ফের প্রতিরোধ গড়ে মনোনয়ন জমা দিক আমাদের দলের প্রার্থীরা। সেই প্রতিরোধে আমাকে সামিল হতে হলেও রাজি।’’
হীরুবাবুর সেই ইচ্ছাপূরণ হওয়া কতটা সম্ভব? সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘শাসকদলের উন্নয়নের ধ্বজাধারী লেঠেলরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে। আমাদের দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নতুন একটা দিনে মনোনয়ন জমা নিতে নির্বাচন কমিশন কতটা প্রস্তুত, সেটাই বড় প্রশ্ন।’’ একই কথা দলের নিচুতলার কর্মী, নেতাদেরও। জেলা পরিষদের এক সদস্যের অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের নির্দেশে বিরোধী নেতাদের বাড়িতে নজর রাখছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে কেউ কি মনোনয়ন দিতে সাহস পাবেন?’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে বীরভূম জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের মধ্যে বিরোধীদের দখলে ছিল ১৭টি আসন। তার মধ্যে ১২টি ছিল সিপিএমের, ২টি করে দখলে করেছিল কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক, ১টি ছিল নির্দলের। রামপুরহাট মহকুমায় ৯টি আসন ছিল সিপিএমের। কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক দু’টি করে আসন পেয়েছিল রামপুরহাট মহকুমাতেই। সেই রামপুরহাট মহকুমায় এখনও পর্যন্ত জেলা পরিষদের একটি আসনেও বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। আগামী কালও তাঁরা তা পারবেন কিনা, সে দিকেই নজর থাকবে মানুষের।