প্রশাসনিক বৈঠকে এসে দলীয় দ্বন্দ্বের কথা শুনলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনালেন দলেরই নেতা!
সোমবার দুপুরে পুরুলিয়ার হুড়ায় প্রশাসনিক সভার পরে বিকেলে বাঁকুড়ার ছাতনা থানার শুশুনিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, সেখানেই বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কাজের বিষয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন জঙ্গলমহলের রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত সমিতিকে উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করছে না। এমনকী, মেয়াদ শেষের আগেই রাইপুরের বিডিও-কে কেন বদলি করে দেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তোলেন ওই তৃণমূল নেতা। তখনকার মতো মমতা এটিকে ‘রুটিন বদলি’ বলে প্রসঙ্গটি আর বাড়তে দেননি। তবে, প্রথম অভিযোগটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রশাসনিক বৈঠকের পরে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা করে একটি বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী। সেই বৈঠকে শান্তিনাথবাবু ও অরূপবাবুর বিবাদ মেটাতে (জেলা রাজনীতিতে শান্তিনাথবাবু অরূপবাবুর বিরোধী শিবিরের লোক হিসাবেই পরিচিত) ওই দু’জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। অন্য জনপ্রতিনিধিদেরও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছেড়ে উন্নয়নের কাজে মন দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে শান্তিনাথবাবু বলেন, “দলনেত্রীকে বলেছি, আমাদের দলেরই একটি গোষ্ঠী ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশ চক্রান্ত করে রাইপুরের বিডিওকে সরাতে চান। এই বিডিও-র কাজের দক্ষতার জন্য প্রশাসনিক কাজে আমাদের ব্লক এগোচ্ছে। উন্নয়নমূলক কাজও হচ্ছে।” তাঁর আরও দাবি, বিডিও-র বদলি হবে না বলে তাঁকে আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার নিয়েছে। বিশেষ করে পাত্রসায়র, রাইপুর, গঙ্গাজলঘাটির মতো ব্লকে এই কোন্দল কার্যত কাছাখোলা হয়ে পড়েছে। এ বার তা চাপা রইল না দলনেত্রীর কাছেও। রাইপুরে দ্বন্দ্ব মূলত ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো এবং আর এক দাপুটে নেতা অনিল মাহাতোর গোষ্ঠীর মধ্যে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে সম্প্রতি অনিল-শিবিরের বিরাগভাজন হয়েছেন রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস। তাঁকে বদলি করে দেওয়ার নির্দেশও এসেছে। শান্তিনাথবাবু জগবন্ধুবাবুর অনুগামী বলেই এলাকায় পরিচিত। তাই তিনি বিডিওর বদলির বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন বলে মনে করছেন এলাকার নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা।
শান্তিনাথবাবু জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে যে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন, তা মানেননি সভাধিপতি অরূপবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আসলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হয় বলে সহসভাপতিরা অনেক প্রকল্পের খবর পান না। রাইপুরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে লিফট গড়তে ২৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। অধিকার প্রকল্পে ৫০টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও উন্নয়নের নানা কাজ চলছে জেলা পরিষদের তরফে।”
বিডিও বদলি প্রসঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিডিও-রা রুটিন মাফিক বদলি হন। তবে, রাইপুরের বিডিওকে বদলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চক্রান্তের অভিযোগ করা হয়েছে কি না, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।” এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যাকেও জেলার প্রশাসনিক কাজ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সভা শেষ হওয়ার পরে সুব্রতবাবু সাংবাদিক বৈঠকে জানান, সরকারি প্রকল্পের কাজ যাতে সময় মতো শেষ হয়, তা দেখতে জেলা প্রশাসনকে ক্যালেন্ডার বানিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।