পদক হাতে বাসন্তী। নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই বাড়িতে অভাব-অনটন। তবে পরিবারের আর্থিক অস্থিরতাতেও নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। ধাপে ধাপে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন পুরুলিয়ার তিরন্দাজ মেয়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশের পাশাপাশি জেলার মুকুটেও পালক জুড়লেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের রানসি গ্রামের বাসন্তী মাহাতো। সম্প্রতি ১৮টি দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াতে এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে দলগত ভাবে তিরন্দাজিতে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন বাসন্তী। দলে ছিলেন মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের দুই তিরন্দাজও। ফোনে বাসন্তী বলেন, “পদক পেয়ে ভীষণ ভাল লাগছে। এখনও সবটা স্বপ্নের মতো। পরবর্তী লক্ষ্য, অলিম্পিকে পদক জেতা।”
বাবা-মা ও এক ভাইকে নিয়ে বাসন্তীর পরিবার। বাবা শান্তিরাম দিনমজুর। ছোট থেকেই বাসন্তী স্বপ্ন দেখতেন, বড় তিরন্দাজ হবেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে খেলাধুলো মানেই ছিল একপ্রকার বিলাসিতা। তবে তাতে দমে যাননি বাসন্তী।
২০১৮ সালে বরাবাজার থানার তিরন্দাজি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তিনি। প্রত্যেক দিন সকালে পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির হতেন। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে পদকও জেতেন। প্রথম থেকে তাঁর পাশে রয়েছে বরাবাজার থানা। এক বছরের মধ্যেই বাসন্তীর অধ্যবসায় ও পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়। ২০১৯ সালে স্পোর্টস্ অথরিটি অব ইন্ডিয়ায় (হাই) প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান তিনি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন রাজ্য ও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে প্রায় প্রত্যেক প্রতিযোগিতাতেই পদক জেতেন বরাবাজারের মেয়ে। গত ১১-১৪ এপ্রিল দিল্লির সুরজমলে জুনিয়র র্যাঙ্কিং বিভাগে দেশে সেরা হন বাসন্তী।
ছাত্রীর সাফল্যে গর্বিত বরাবাজারের শাঁখারি-বাঁশবেড়িয়া হাই স্কুলের শিক্ষক তন্ময় মহাজন। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই ওর খেলায় ঝোঁক ছিল। আমরা খুবই খুশি। বাসন্তী লক্ষ্যে এগিয়ে যাক, সেটাই চাই।” জেলার ক্রীড়া মহলেও বাসন্তীকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। ঘরের মেয়েকে এ বার অলিম্পিকের লক্ষ্য ভেদ করতে দেখতে চান জেলাবাসী।