জলকষ্টের দিন গুনছে বাঁকুড়া
Water crisis

কবে চালু হবে ‘অম্রুত’ প্রকল্প

সামগ্রিক ভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল দেওয়ার পরিমাণে টান পড়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৭
Share:

ফুটিফাটা: কারকডাঙা পাম্প হাউসের পাইপলাইনের কাছে। নিজস্ব চিত্র।

গ্রীষ্মের গোড়াতেই দ্বারকেশ্বর নদ ও গন্ধেশ্বরী নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যায় বাঁকুড়া শহরে পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ। পাশাপাশি, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে শহরে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ‘অম্রুত’ প্রকল্পের কাজও অনেকাংশে বাকি। সমস্যা মেটাতে পুরনো পাইপলাইনের সঙ্গে ওই প্রকল্পের পাইপলাইনের সংযোগ ঘটিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষ জল সরবরাহে উদ্যোগী হলেও, পর্যাপ্ত জল মিলছে না বলে অভিযোগ শহরবাসীর বড় অংশের।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের ২২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টাইমকলে ঠিকঠাক জল মিলছে না। তবে ওই দু’টি ওয়ার্ড নয়, সামগ্রিক ভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল দেওয়ার পরিমাণে টান পড়েছে বলে অভিযোগ। শহরের পাঠকপাড়ার এক বধূ ভারতী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগে সারা দিনে দু’দফায় মোট দু’ঘণ্টা জল পেতাম। এখন মেরেকেটে আধ ঘণ্টা জল পাচ্ছি। তা-ও জল পড়ছে খুবই ধীরে।”

বাঁকুড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য দিলীপ আগরওয়াল বলেন, “দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরীর জলস্তর নেমে গিয়েছে। তাতেই জলের জোগানে টান পড়ছে। ‘অম্রুত’ প্রকল্পের জল পুরনো পাইপলাইনের মাধ্যমে দিয়ে জলের জোগান স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে।”

Advertisement

পাশাপাশি, নদীবক্ষ থেকে যথেচ্ছ ভাবে বালি তোলাতেও সমস্যা বেড়েছে বলে মত পুরকর্তাদের। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘বাঁকুড়া শহর লাগোয়া আসনা এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি পাম্পহাউস আছে দ্বারকেশ্বরে। সেখান থেকে শহরের একাংশে জল সরবরাহ হয়। তবে ওই এলাকায় বেআইনি ভাবে বালি তোলার কারণে জলের জোগানেও টান পড়ছে।’’

বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে একাধিক বার আনা হলেও পদক্ষেপ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। প্রশাসনের তরফে অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়।

বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে খবর, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে দৈনিক ২৯ হাজার লিটার মেলে। ‘অম্রুত’ প্রকল্পে শহরের কেশিয়াকোল এলাকায় ‘রিজ়ার্ভার’ গড়ে সেই জল পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে বাঁকুড়া শহরের সর্বত্র এখনও পাইপলাইন পাতা হয়নি। এ ছাড়া, দ্বারকেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচটি ও গন্ধেশ্বরীতে একটি পাম্পহাউস থেকে শহরে জল সরবরাহের পুরনো প্রকল্পও চালু রয়েছে।

পুর-কর্তাদের দাবি, ২৯ হাজার লিটার জল বাঁকুড়া শহরের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই বাকি জল দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরী থেকে তুলে জোগান দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় দু’টি নদীই শুকিয়ে গিয়েছে। সমস্যা মেটাতে মার্চের মাঝামাঝি কংসাবতী জলাধার থেকে কিছুটা জল ছাড়া হলেও বিশেষ সুরাহা হয়নি।

পুরসভার জল বিভাগের এক কর্তা জানান, বর্তমানে দু’টি নদীতেই জলস্তর ২০-২৫ ফুট নেমে গিয়েছে। ফলে, পাম্পহাউসগুলির বেশির ভাগ সাবমার্সিবল পাম্পই জল তুলতে পারছে না। ফলে, শহরের যে সব এলাকায় দুর্গাপুর ব্যারাজের জল সরবরাহের পাইপলাইন পাতা হয়নি, সেখানে জলের জোগানে টান পড়ে। সমস্যা মেটাতে তাই পুরসভার তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়া ‘অম্রুত’ প্রকল্পের নানা ‘রিজ়ার্ভার’ থেকে দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরী নদীর উপরে গড়া পাম্পহাউসগুলিতে জল পাঠিয়ে তা শহর জুড়ে সরবরাহ করা হবে।

সেই মতো কেশিয়াকোলের ‘অম্রুত’ প্রকল্পের ‘রিজ়ার্ভার’ থেকে সরাসরি দ্বারকেশ্বরের মাদাকাটা পাম্পহাউসে জল পাঠিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে তাতে সমস্যা কিছুটা মিটলেও সামগ্রিক ভাবে জলের জোগানে টান পড়ছে বলে মানছেন পুরকর্তাদের একাংশও। সরবরাহের সময়ও সীমিত করা হয়েছে।

এ দিকে, জলকষ্ট নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করছেন বিরোধীরা। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “অম্রুত প্রকল্পের কাজ শহরের সর্বত্র শেষ হয়ে গেলে এত দিনে জল-সঙ্কট মিটে যেত। তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের ব্যর্থতার জন্যই কাজ শেষ হয়নি।”

তবে দিলীপবাবুর দাবি, “শহরের ৯০ শতাংশের বেশি এলাকাতেই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।কাজে কোথাও কোনও ঢিলেমি করা হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement