যখন তখন এই প্যান্ডেলের সামনে এসে হাজির হচ্ছে হাতির দল। তাতে বিয়েবাড়িতে আসা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার রাত পেরোলেই পরিবারে জোড়া বিয়ের অনুষ্ঠান। বাড়িতে চলে এসেছেন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব। তার সঙ্গে বার বার হাজির হচ্ছে ‘অনাহুতেরাও’। বিয়ের প্যান্ডেলের সামনে যখন তখন চলে আসছে হাতির পাল। ভয়ে এবং আতঙ্কে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না কেউ। বিয়ের অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে শেষমেশ বন দফতরের দ্বারস্থ হল পরিবার। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘটনা।
কয়েক মাস আগে ভাই এবং ভাইঝির দুটি পৃথক জায়গায় বিয়ের পাকা কথা সারেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের কদমা গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ মণ্ড। দুই বিয়েই একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। দিন স্থির হয়েছে ১৭ জানুয়ারি, মঙ্গলবার। সোমবার জোড়া বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হতে চলছে। কিন্তু বিয়েবাড়ির ব্যস্ততায় উটকো ঝামেলা হাজির। স্বরূপ জানান, দিন কয়েক ধরে বাড়ির সামনে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু তাঁদের চিন্তা বাড়াচ্ছে হাতির দল।
যখন তখন কদমা গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে হানা দিচ্ছে হাতির দল। মণ্ডল পরিবার ভেবেছিল বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে দলছুট কয়েকটি হাতি আবার কাছের জঙ্গলে ফিরে যাবে। কিন্তু সে আর হচ্ছে কোথায়! কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত হাতির দলটি গ্রাম ছাড়েনি। বরং দিনকে দিন তাদের তাণ্ডব বেড়ে চলেছে এলাকায়। দিন দুই আগে তো প্যান্ডেলের কাছাকাছি চলে আসে একটি হাতি! এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মণ্ডল পরিবারের সদস্যেরা। সম্প্রতি পৃথক দু’জায়গায় হাতির হানায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশপাশের গ্রামেও হাতির দলের তাণ্ডব অব্যাহত। এই অবস্থায় বন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বরূপ। বন দফতরের বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন তিনি। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বন দফতরও বিয়ের দিন অর্থাৎ, মঙ্গলবার এলাকায় হাতির দলের উপর নজরদারির আশ্বাস দিয়েছে।
স্বরূপের কথায়, ‘‘গ্রামের পাশের জঙ্গলে হাতির দল রয়েছে। হাতির হানায় প্রতি দিনই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় পরিবারে বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করেছেন। জানি না কী ভাবে সব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে! বন দফতর যে আশ্বাস দিয়েছে, সেটুকুই ভরসা।’’ পরিবারের আর এক সদস্যা রিঙ্কু মণ্ডল বলেন, ‘‘নিমন্ত্রিতরা কী ভাবে আসবেন, কী ভাবেই বা গোটা অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে হবে, সেই আশঙ্কায় আমাদের সকলের ঘুম উড়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘মণ্ডল পরিবারের আশঙ্কা স্বাভাবিক। তবে ওই পরিবারের অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্ন করা যায়, তার জন্য হাতি তাড়ানোর জন্য বিশেষ দল রাখা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে। আশা করি, সব ভালয় ভালয় মিটবে।’’