প্রতীকী ছবি।
লাক্ষা শিল্পের দূষিত জল আমরুহাঁসা নদীতে ফেলা যাবে না। বলরামপুরের লাক্ষা ব্যবসায়ীদের এ কথা জানিয়ে দিল প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যবসায়ীদের বৈঠকে ডেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বলরামপুরের লাক্ষাকুঠির বর্জ্য দূষিত করে তুলেছে আমরুহাঁসা নদীর জল। নদী তীরের গ্রাম আমরুহাঁসা -সহ লাগোয়া এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, গোটা গ্রামের বাসিন্দাদের স্নান, গবাদি পশুর পানীয় জল, কাপড় কাচা বাসন ধোয়ার মতো কাজে ব্যবহার করা হয় নদীর জল। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘নদীর জল এতটাই দূষিত হয়ে গিয়েছে যে, তা ব্যবহারের ফলে রোগের শিকার হতে হচ্ছে গ্রামের মানুষজনকে। মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। দূষণে কালো হয়ে গিয়েছে নদী।’’
নদী বাঁচানোর দাবিতে ‘আমরুহাঁসা জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে গত ২ জুলাই পুরুলিয়া-জামশেদপুর (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়কে আমরুহাঁসা নদীর উপরের সেতু দখল করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের বহু বাসিন্দা। আন্দোলনের জেরে সকাল থেকে আটকে পড়ে ব্যস্ত এই সড়ক।
প্রশাসনের তরফে আন্দোলনকারীদের জানানো হয়, তারা নদীর দূষণ বন্ধে উদ্যোগী হবে। লিখিত এই প্রতিশ্রুতির পরে, বিকেলে অবরোধ ওঠে।
ওই ঘটনার পরেই প্রশাসনের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হল লাক্ষা ব্যবসায়ীদের। বিডিও (বলরামপুর) ধ্রুবপদ শাণ্ডিল্য জানান, লাক্ষা ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই লাক্ষা শিল্পের বর্জ্য জল নদীতে ফেলা যাবে না। বর্জ্য নদীতে ফেলা হলে প্রশাসন দূষণ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।
বলরামপুর লাক্ষা ব্যবসায়ী সমিতির তরফে রঞ্জিত মাঝি বলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের বৈঠকে জানিয়েছে যে, শিল্পের বর্জ্য-জল কোনও ভাবেই নদীতে ফেলা যাবে না। আমরাও চাই না শিল্পের বর্জ্য-জল নদীতে পড়ুক।’’
তিনি জানান, বলরামপুরে এই মুহূর্তে শতাধিক লাক্ষাকুঠি রয়েছে। কম বেশি পাঁচ থেকে ছ’হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। গালা তৈরির জন্য শিল্পের কাঁচামাল লাক্ষা ধুতে হয়। লাক্ষা ধোওয়ার জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘কাঁচামাল ধোওয়া বন্ধ হয়ে গেলে শিল্পও বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বর্জ্য-জল ফেলার জন্য যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন, তা সমস্ত কুঠির কাছে নেই। তাই শিল্পের স্বার্থে সমস্যা সমাধানের রাস্তা দু’পক্ষকেই খুঁজতে হবে।’’
রঞ্জিতবাবু জানান, সাত দিন পরে ফের একটি বৈঠক করবে প্রশাসন। বর্জ্য-জল পরীক্ষা করে তা অন্য কাজে লাগানো যেতে পারে কি না তা দেখার প্রস্তাব ওই বৈঠকে দেবে সমিতি। তিনি বলেন, ‘‘লাক্ষা ধোয়ার জন্য আমরা যে রাসায়নিক ব্যবহার করি, তার পরিবর্তে অন্য কোনও উপায়ে লাক্ষা ধোয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে ভেবে দেখার প্রস্তাবও আমরা প্রশাসনকে দেব।’’
অন্য দিকে, বলরামপুরের নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করতে পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। বিডিও (বলরামপুর) বলেন, ‘‘ওই খাতে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। নদী এড়িয়ে বর্জ্য-জল বলরামপুরের দুই প্রান্তে ফেলা হবে।’’