পাশে: মৃত দলীয় কর্মীর বাড়িতে সিপিএম নেতারা। নিজস্ব চিত্র।
দলের কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে বাড়িতে এসে পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে গেলেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারেরও দাবি তুললেন। শুক্রবার দুপুরে প্রয়াত প্রাক্তন জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদারও বাড়ি যান তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ৭ নভেম্বর নানুরের বালিগুণী গ্রামে পতাকা টাঙানোকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী বাদল শেখকে খুনের অভিযোগে সরব হয় সিপিএম। পর দিন জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিলের পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভও দেখানো হয়। কিন্তু, এত দিন পরেও পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। কাউকে গ্রেফতার বা আটকও করা হয়নি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গ্রামের বিবাদের জেরে ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।
এই অবস্থায় এ দিন নানুরে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এল রাজ্যের বাম প্রতিনিধি দল। দলে ছিলেন রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই এর তপন গঙ্গোপাধ্যায়, আরএসপির দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের রেবতী ভট্টাচার্য, জীবন সাহা প্রমুখ। রবীনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি এ রাজ্যে খুন হলে চেপে যাওয়ার চেষ্টা হয়। সরকারের উচিত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু, এখানে স্ত্রীকে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলানো হয়েছে। রাজ্য সম্পাদক আসবেন। রাজ্য কমিটির বৈঠককে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। দলের সিদ্ধান্ত মতো পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।’’
জেলায় শিল্প সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুজন চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ডেউচা-পাঁচামি পুরনো প্রকল্প। সরকার কৃতিত্ব দাবি করে বিধানসভায় বারবার বিবৃতি দিয়ে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ১ কোটি ৩৮ লক্ষ কর্মসংস্থানের দাবি করছে। অথচ, কোনও কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। মুখমন্ত্রী আগে ঠিক করুন উনি ওখানে জমি কিনবেন না অধিগ্রহণ করবেন।’’ সুজনের আরও দাবি, ‘‘সিঙ্গুরের সময় আইন মেনে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তার পরেও উনি বিরোধিতা করেছিলেন। আমরা শিল্পের পক্ষে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে শ্বেতপত্র প্রকাশ না করে গায়ের জোরে কিছু করতে চাইলে হবে না।’’ সীমান্তরক্ষার প্রশ্নে বিএসএফের ভূমিকারও সমালোচনা করেন সুজন।
এ দিকে, দলের কর্মীর স্ত্রীর হাতে কিছু সাহায্য তুলে দেন প্রতিনিধিরা। স্ত্রী জরিনা বিবি এ দিনও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সেভ ডেমোক্রেসির একটি প্রতিনিধি দলও এ দিন তাঁদের বাড়ি যায়। পুলিশের সঙ্গে কথাও বলে। দলের পক্ষে সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘আমরা ভিডিয়ো ফুটেজে বাদল শেখের স্ত্রীকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করতে শুনেছি। আজ তাঁর চোখে মুখে ভীত-সন্ত্রস্ত ভাব। অভিযোগ করতেও ভয় পাচ্ছেন। পুলিশকে যথাযথ তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’’ পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত চলছে।
এ দিন দুপুরে বোলপুরের ধান্যসারা গ্রামে জেলা সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদক মনসা হাঁসদার বাড়িও যায় প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার দুপুরে প্রয়াত হন তিনি। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘কমরেড মনসা হাঁসদা অত্যন্ত পুরনো কর্মী ছিলেন। দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জন। কৃষক আন্দোলন, প্রশাসনের নানা দায়িত্ব এমনকি বীরভূমের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার সম্পাদকের দায়িত্ব দীর্ঘ দিন সামলেছেন। মনসাদার এই ভাবে চলে যাওয়ায় আমরা মর্মাহত।’’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৫ তারিখ তাঁর স্মৃতিতে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে সিউড়িতে। সভায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সহ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে অন্য নেতৃত্বের।