মহম্মদবাজারের সারেণ্ডা গ্রামে কেন্দ্রীয় কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। ছবি: পাপাই বাগদি।
পঞ্চায়েত ভোটের দু’দিন আগে গত ৬ জুলাই মহম্মদবাজার থানার হিংলো পঞ্চায়েতের সারেণ্ডা গ্রামে বিজেপি কর্মী দিলীপ মাহারার দেহ উদ্ধার হয়। রবিবার সেখান এসে নানা প্রশ্ন তুললেন জাতীয় তফসিলি জাতি-জনজাতি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। পুলিশের কাজ নিয়ে ‘উষ্মাও’ প্রকাশ করেন তিনি। ‘ঠিকমতো’ তদন্ত না হলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন ভাইস চেয়ারম্যান।
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন অরুণ। তিনি প্রথমেই মৃতদেহ উদ্ধারের জায়গা পরিদর্শন করেন। মৃতদেহ কোথায় উদ্ধার হয়, পুলিশ কী ভাবে খবর পায়, কোন পুলিশ আধিকারিক মৃতদেহ উদ্ধার করেন— এমন নানা তথ্য চান তিনি। পরে মৃতের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে একাধিক প্রশ্ন তোলেন অরুণ। তদন্তকারী অফিসার, জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার কেন এ দিন ঘটনাস্থলে আসেননি সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকি, পরিবারের অভিযোগের তালিকায় রামপুরহাট বিধানসভার মহম্মদবাজার ব্লকের যুগ্ম সভাপতি কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম থাকলেও কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি, এ নিয়েও অরুণের প্রশ্নের মুখে পড়েন উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকেরা।
অরুণ বলেন, “কমিশন যখনই ঘটনাস্থলে যায়, তখন সেখানে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, আমি যেখানে যাচ্ছি, সেখানে ওঁরা অনুপস্থিত থেকে অধস্তন কোনও অফিসারকে সামনে নিয়ে আসছেন। যাঁদের কমিশনের সামনে বক্তব্য দেওয়ার কোনও অধিকারই নেই।’’ এর পরেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘তদন্তে গাফিলতি হলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।’’
সিউড়িতে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পরেও তিনি জানান, কমিশনের হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আছে। সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে কমিশন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে দিল্লিতে ডেকে পাঠাতে পারে। সেই ডাক উপেক্ষা করলে প্রথমে সমন ও প্রয়োজনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতাও কমিশনের আছে বলে দাবি অরুণের। তিনি বলেন, “জেলাশাসক দেরিতে হলেও আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আমাকে সম্মান করেছেন। কিন্তু পুলিশ সুপারকে ১০ দিন আগে মেল করে জানাল হলেও কী ভাবে তিনি ছুটিতে থাকেন সেটাও দেখা হবে।’’
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। কমিশনের প্রতিনিধি এসেছেন। যা বলার তিনিই বলবেন।’’ অন্য দিকে, জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এ দিন বোলপুরের রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জু বর্মণ, তাঁর স্বামী মদন বর্মণের মৃত্যুর ঘটনাটিকে তফসিলি জাতির বিরুদ্ধে অত্যাচার হিসেবে গণ্য করার আবেদন জানিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন। চিঠিতে এই মৃত্যুর পিছনে ১২ জন ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, নিজের নিরাপত্তারও দাবি জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে, সিউড়ির বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “সারেন্ডার ঘটনায় যে ভাবে রাজনৈতিক রং লাগানো অত্যন্ত নিন্দনীয়। কমিশন নিজের মতো কাজ করবে। আমাদের অসুবিধা নেই।”