সিবিআই পৌঁছে গেল সুকন্যার দরজায়। ফাইল চিত্র।
তিনি নিজে তরুণ বয়স থেকে রাজনীতি করে আজ শাসকদলের জেলা সভাপতি। তাঁর প্রভাব ও দাপট নিয়ে কত কাহিনি জেলা রাজনীতির ইতিউতি। এ হেন অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট) কিন্তু বরাবর সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন নিজের একমাত্র মেয়ে সুকন্যাকে। কিন্তু, গরু পাচার মামলা সূত্রে সিবিআই পৌঁছে গেল সেই সুকন্যারই দরজায়। একই দিনে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতা নিয়ে অনিয়মের নালিশেও এসে গেল অনুব্রত-কন্যার নাম।
বাবার সঙ্গে দলের মিটিং, মিছিল কিংবা জনসভায় কখনও দেখা যায়নি সুকন্যাকে। মেয়েকে আড়াল করেই রাখতেন বাবা। সচেতন ভাবেই মেয়েকে রাজনীতিতে জড়াননি বলে অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের একাংশ জানাচ্ছেন। কোভিড-কালে একবার বাবার সঙ্গে গরিব-দুঃস্থদের চাল-ডাল বিলি করতে দেখা গিয়েছিল সুকন্যাকে। তার পর আর তাঁকে আর কোনও কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যায়নি। বাড়ি থেকে খুব বেশি হলে ২০০-৩০০ মিটার দূরের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেলেও স্কুলে অবশ্য কেউ তাঁকে যেতে দেখেননি।
অনুব্রতের এক অনুগামী, যাঁর আনাগোনা ছিল ‘দাদার’ বাড়িতে, জানালেন, জেলা সভাপতির মেয়ে হওয়ার কারণে সুকন্যার একটা প্রভাব বরাবরই রয়েছে। সামনে সাহস করে কেউ কথা বলেন না। এ সবের বাইরে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক একেবারে বন্ধুর মতো। পাড়ায় তেমন বেরোন না সুকন্যা। অনুব্রতের স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে শান্তশিষ্ট সুকন্যা বাবার একমাত্র সঙ্গী হয়ে ওঠেন। বাড়িতে যেটুকু সময় অনুব্রত থাকতেন, বেশির ভাগটাই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতেন। অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর বাড়িতে মঙ্গলযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে সদ্য। সূত্রের খবর, সব আয়োজনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন সুকন্যাই।
এ হেন সুকন্যা একাধারে স্কুলের শিক্ষিকা, চালকল-সহ আরও একাধিক সংস্থার ডিরেক্টর বলে সিবিআই জানতে পেরেছে। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও সুকন্যা ‘ভোলেবোম’ রাইস মিলের কাজে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন। যদিও ওই অ্যাকাউন্ট সুকন্যার কি না, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও তাঁর নামে প্রচুর পরিমাণে জমি সম্পত্তি রয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। সবার কার্যত চোখের ‘আড়ালে’ থাকা এই মেয়ে সম্পর্কে এত কিছু জেনে অবাক বোলপুরের নিচুপট্টির বাসিন্দারাও। কিন্তু, মুখ খুলতেনারাজ সকলেই।
মেয়েকে নিয়ে একটা আক্ষেপ বরাবর থেকেছে বীরভূমের ‘কেষ্টদার’। তা হল, বিশ্বভারতীতে সুকন্যাকে না পড়াতে পারার আক্ষেপ। নিজেই বলেছিলেন, “আমার একটা দুঃখ রয়েছে। বিশ্বভারতীতে মেয়েকে ভর্তি করানোর খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পারিনি।” বিশ্বভারতীতে না পারলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্যেই যে তাঁর মেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন, তা-ও স্বীকার করেছেন অনুব্রত।
সেই মেয়ের আজ কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা। আর বাবা সিবিআই হেফাজতে।