ক্লাসঘর: পুকুরের পাশে সেই অঙ্গনওয়াড়িতে চলছে পড়াশোনা। নানুরের দাসপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
মাথার উপর ছাদ মানে ন্যাড়া বাবলা গাছ!
গাছের সামনেই গ্রামের রাস্তা। পা বাড়ালেই পুকুর। চারপাশে খোলা মাঠ। সেখানে খেলছে ঠান্ডা হাওয়া। ভোরের কুয়াশা গায়ে মেখে গুটি গুটি পায়ে সেই গাছতলায় এসে মাদুর পেতে বসে জনা তিরিশেক কচিকাঁচা। কিছুক্ষণেই তাদের দিদিমণিও এসে পৌঁছন সেখানে। শুরু হয় অঙ্গনওয়াড়ির পড়াশোনা।
কোনও কাহিনি নয়, বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে নানুরের কালিকাপুর দাসপাড়ার অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রটি। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন করলেও ওই অঙ্গনওয়াড়ির জন্য ভবন নির্মাণে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু হয়েছিল। এখন সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০। কিন্তু আজও ওই কেন্দ্রের নিজস্ব কোনও ভবন নেই। নেই মিড-ডে মিল রান্নার ব্যবস্থাও। এক দিকে রাস্তা, অন্য দিকে পুকুর— তারই মাঝখানে একচিলতে জায়গায় পড়ুয়াদের ক্লাস করান কাবেরী ঘোষ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য পুষ্টি প্রকল্পের খাবার বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে যান তিনি-ই।
বছর চারেকের বৃন্দাবন দাস, সুমনা দাস বলে— ‘‘গাছতলায় বসে পড়াশোনা করি। কষ্ট হয় খুব। মাঠ, পুকুরের দিক থেকে সব সময় ঠান্ডা হাওয়া আসে। শীতে ঠকঠক করে কাঁপি। ও দিকে রাস্তায় বড় কোনও গাড়ি এলেও পড়া থামিয়ে দূরে সরে দাঁড়াতে হয়।
অঙ্গনওয়াড়ির বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অভিভাবক মহলেও। অন্নপূর্ণা দাস, মহাদেব দাসের মতো অনেকে জানান, সকালে পুকুরের ধারে বসে পড়াশোনা করায় ছেলেমেয়েদের ঠান্ডা লেগে যায়। তার উপর রাস্তা দিয়ে মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেল, ভটভটি যাতায়াত করে। কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারালে তা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে পারে ওই অঙ্গনওয়াড়িতে। পাশের পুকুর নিয়েও চিন্তায় থাকেন অভিভাবকদের সকলেই। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনকে এ সব কথা বললেও লাভ হয়নি।
একই কথা বলেন কাবেরী ঘোষও। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একা যতটা পারি সামলানোর চেষ্টা করি। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও সহায়িকা নিয়োগ করা হয়নি। ব্যবস্থা হয়নি অঙ্গনওয়াড়ির ভবনেরও।’’
দাসকলগ্রাম-কড়েয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্য মামনি দাস বলেন, ‘‘ঘর না থাকায় ওই অঙ্গনওয়াড়ির পড়ুয়াদের খুবই অসুবিধা হয়। জায়গার অভাবেই ঘর তৈরি করা যাচ্ছে না। আমরা জায়গার খোঁজ করে চলেছি।’’ একই কথা বলেন ব্লক সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের সুপারভাইজার সবিতা মাঁঝিও। তিনি জানান, জায়গা জোগাড় হলেই ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও জানান, ওই কেন্দ্রের সহায়িকা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হলেই সেখানে সহায়িকা নিয়োগ করা হবে।