বিশ্বভারতীর আনন্দবাজারে আসার জন্য পোস্টকার্ডের মাধ্যমে আমন্ত্রণ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর এক অন্য স্বাদের মেলা হয়ে থাকে শান্তিনিকেতনে। আর পাঁচটা মেলার সঙ্গে এই মেলার তেমন মিল নেই। এ হল শান্তিনিকেতনের ‘আনন্দবাজার’ বা ‘আনন্দমেলা’। সেই আনন্দবাজারে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হারিয়ে যেতে বসা পোস্টকার্ডকেই আমন্ত্রণপত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্বভারতীর দর্শন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিভাগের পড়ুয়ারা। যা ইতিমধ্যেই সকলের নজর করতে শুরু করছে। পড়ুয়াদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছেন সকলেই।
আজ, শনিবার মহালয়ায় বসবে সেই মেলা। এক দিনের এই মেলা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট মত পাওয়া যায় না। তবে, বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, পৌষমেলার সময়ে ‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’ নামে নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস দিয়ে মেলার আয়োজন করতেন আশ্রমের মহিলারা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের উৎসাহ দিতে সেই মেলাতে কেনাকাটাও করেছিলেন বলে জানা যায়। এর পরে দুর্গাপুজোর ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের অনাবিল আনন্দ দেওয়ার জন্য বিশ্বভারতীতে শুরু হয় ‘আনন্দবাজার’ বা ‘আনন্দমেলা’। প্রতি বছর মহালয়ার দিন রীতি মেনে এই মেলা হয়ে থাকে।
আনন্দবাজার বা আনন্দমেলা হয়ে থাকে শান্তিনিকেতনের গৌর প্রাঙ্গণে। মেলায় থাকে বিশ্বভারতীর সমস্ত বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তৈরি নানাবিধ শিল্পকর্ম, হরেক রকম খাদ্যসম্ভার। এ ছাড়াও থাকে তাৎক্ষণিক কবিতা লেখা কিংবা ছবি আঁকা, নানা রঙের গৃহসজ্জার ছোট ছোট উপকরণ, ছোটদের খেলনা। মেলা থেকে যা লাভ হয়, তা বিশ্বভারতীর কর্মিমণ্ডলীর সেবা শাখায় জমা দেন পড়ুয়ারা। সেই টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয় দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের। করোনা পরিস্থিতির কারণে পরপর দু'বছর মেলার আয়োজন না হলেও গত বছর ভাল ভাবেই উদ্যাপিত হয়েছিল এই মেলা।
এ বছরও আজ গৌড় প্রাঙ্গণে শান্তিনিকেতনে বার্ষিক আনন্দবাজার অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় আমন্ত্রণ জানাতে হারিয়ে যাওয়া পোস্টকার্ডকেই বেছে নিয়েছেন দর্শন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিভাগের পড়ুয়ারা। পোস্টকার্ডের নকশা থেকে শুরু করে লেখা, সবই তাঁরা শান্তিনিকেতন কেন্দ্রিক করে তুলেছেন। যা সকলকে আকৃষ্ট করতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিচিত, বন্ধুবান্ধব সকলকেই আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেছেন। ওই বর্তমান পড়ুয়ারা বলেন, “আনন্দবাজার নিয়ে সকলেরই উৎসাহ উন্মাদনা থাকে। সব ভবনের পড়ুয়ারা নিজেদের ভাবনা সামনে আনে। আমরাও নতুন কিছু করব ভাবছিলাম। সেই থেকেই পোস্টকার্ডের ভাবনায় আশা করি সকলের ভাল লাগবে।”