রাজনগরের ভবনীপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
মাত্র তিনটে বছর। পড়ে থাকা খাস পতিত জমিই বদলে গেল ইকো-ফ্রেণ্ডলি পার্কে।
রাজনগরের ভবনীপুর গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিছনের দিকের আট একর জায়গা জুড়ে এখন রঙের সমাহার। কী নেই সেখানে! বিশাল জলাশয়, জলাশয়ের চারদিকে আমলকি, কাপাস, নিম, মেহগনি গাছ। অন্যদিকে ৭০০ আম গাছের বাগান। বাচ্চাদের খেলার জন্য নানা রকম রাইড। বাঁধানো রাস্তা। সৌর বিদ্যুতের পথবাতি। আগামী দিনে সেখানেই সংযোজিত হতে চলেছে জেলার দ্বিতীয় প্রজাপতি পার্ক। জেলা প্রশাসন ও রাজনগরের ভবনীপুর পঞ্চায়েত জানাচ্ছে, মূলত বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশন ও অন্য সরকারি প্রকল্পের টাকা যথাযথ ও পরিকল্পনা মাফিক ব্যয় করে গড়ে ওঠা ওই পার্ক এখন শুধু এলাকার নয়, গোটা রাজনগর ব্লকের সম্পদ। এই পার্ককে ঘিরে অন্তত পাঁচটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সুস্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে।
জেলার পিছিয়ে পড়া ব্লকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন পার্ক গড়ার ভাবনা কী করে? পঞ্চায়েত প্রধান বামাপদ ঘোষ জানাচ্ছেন, প্রথম পরিকল্পনা ছিল পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মদিবস সৃষ্টি করা। তাঁর কথায়, ‘‘মাটির কাজে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় পুকুর কাটায়। কিন্তু এখন যেহেতু ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত মালিকানায় পুকুর কাটা বা সংস্কার বন্ধ, তাই প্রথমেই চেয়েছিলাম এলাকায় খাসজমি, যেখানে জলাশয় গড়লে অনেক মানুষ কাজ পাবেন। সেই জন্যই খাস জমি খুঁজছিলাম।
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরই হাসপাতালের পিছনের দিকের জমিতে খুঁজে একটি বিশাল পুকুর কাটানো হয় বছর তিনেক আগে এমজিএআরইজিএ প্রকল্পে। খরচ হয় ৯ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ওই পুকুরের চারদিকে গাছ লাগানো হয়। মেহগনি ও নিম ছাড়াও আমলকি, কাপাসের মতো গাছ রয়েছে, যেখান থেকে নিয়মিত আয় সম্ভব। মৎস্য দফতরের সহায়তায় পুকুরে মাছ চাষের ব্যবস্থাও হয়েছে। পরের ধাপে লাগানো হয় ৭০০ আমের চারা। সেই গাছগুলিতে এ বারই মুকুল এসেছে। চতুর্দশ অর্থকমিশনের টাকায় তৈরি হয়েছে সোলার পাম্প। গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সদাব্রত আচার্য বলছেন, ‘‘ধীরে ধীরে অন্য খাতে শিশুদের জন্য পার্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন রাইড লাগানো হয়েছে। পার্কে চলার জন্য রাস্তা রয়েছে। আছে সৌর পথবাতি। এটাই জেলা প্রশাসনকে খুব আনন্দ দিয়েছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি প্রজাপতি পার্কের অনুমোদন মিলেছে। বরাদ্দ হয়েছে ২৭ লক্ষ টাকা। যেটা বিরাট পাওনা।’’ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই ইকো পার্ক সব মিলিয়ে গোটা ব্লকের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ১০০ দিনের কাজ ও সরকারি অন্য প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত টাকায় গড়া হবে প্রজাপতি উদ্যান। কী ভাবে ওই পার্ক গড়া হবে সে ব্যাপারে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিউড়ি ঘেঁষা কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল অ্যান্ড পাবলিক ইন্সটিটিউশনের পর দ্বিতীয় প্রজাপতি উদ্যান হচ্ছে এখানেই। বন দফতরের কর্তাদের কথায়, ‘‘প্রজাপতি পার্ক গড়ার অন্যতম শর্ত এই এলাকার সহজে বেড়ে উঠতে পারে এবং বিভিন্ন প্রজাপতির অত্যন্ত প্রিয় গাছগুলিকে নির্বাচন করা। যে গুলিকে ‘হোস্ট ট্রি’ বলা হচ্ছে। প্রজাপতির এই সংসার সাজাতে একটি তার জালে ঘিরে ফেলা জায়গায় প্রজাপতিদের পছন্দের অতসী, আকন্দ, লেবু, অড়হর, রঙ্গনের মতো বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ এখানেও লাগানো হতে পারে।’’
তবে কোন প্রজাতির গাছ থাকবে উদ্যানে সেটা ঠিক করবেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ প্রজাতি বিশেষে বিভিন্ন গাছের পাতায় ডিম দেয় প্রজপতিরা। একই ভাবে ডিম ফুটে বার হওয়া লার্ভা বিশেষ কিছু গাছের পাতা খায়। ওই কারণে উদ্যানের গাছ নির্বাচনের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া জল ও বালিযুক্ত এলাকা গড়ে তোলা যেখান থেকে জল পেতে পারে প্রজাপতিরা। সেই কাজেও হাত পড়েছে। সচরাচর যে সব প্রজাতি দেখা যায় সেগুলিতে তো বটেই ভবিষ্যতে বিশেষ কিছু প্রজাতির প্রজাপতি এখানে নিয়ে আসা হবে।
এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘একটি পতিত জমিকে উন্নত করে সেখানে সম্পদ তৈরি হলে সেখানে যেমন কর্ম দিবস তৈরি হয়, একই ভাবে সেটাতে সুস্থায়ী কর্ম সংস্থানও হতে পারে। গাছের ফল, পুকুরের মাছ, পার্ক ও প্রজাপতি পার্কে ঢোকার টিকিট থেকে আয়, আনাজ চাষ— সব মিলিয়ে এলাকার অনেকের আয় বাড়বে।’’ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলছেন, ‘‘আগামী দিনে জেলার অন্যতম সেরা ইকো ফ্রেণ্ডলি পার্ক হিসেবে মর্যাদা পাক সেটাই চাই।’’