শিল্পী বাবলু নন্দী। নিজস্ব চিত্র।
পাথর-খোদাই, নারকেলের মালা-খোদাই, টেরাকোটা ও ডোকরা শিল্পের পর এ বার শঙ্খ-খোদাই শিল্প বাঁকুড়াকে এনে দিল জাতীয় পুরস্কার। চলতি বছর শঙ্খ-খোদাই শিল্পে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাঁকুড়ার হাটগ্রামের শিল্পী বাবলু নন্দী। কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের তরফে সম্প্রতি প্রকাশিত তালিকায় জাতীয় পুরস্কার প্রাপক হিসাবে বাবলুর নাম রয়েছে। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে ফের বাঁকুড়ার কুটিরশিল্প জাতীয় পুরস্কার এনে দেওয়ায় খুশি জেলার শিল্পীমহল।
অতীতে একাধিক বার জাতীয় পুরস্কার এসেছে বাঁকুড়ায়। জেলার শঙ্খ শিল্পের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত ইন্দপুর ব্লকের হাটগ্রামে বাড়ি বাবলুর। প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাবা সত্য নন্দী ও মা গঙ্গা নন্দীর হাত ধরে শঙ্খ খোদাই শিল্পে হাত পাকানোর শুরু। পুরুলিয়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার সময় পড়াশোনায় ইতি টেনে পারিবারিক শঙ্খ খোদাই শিল্পে যুক্ত হয়ে পড়েন। শিল্পের তালিম নেন গ্রামেরই বিখ্যাত শঙ্খ খোদাই শিল্পী সুবোধ দত্ত ও জাতীয় মেরিট পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী বংশীধর মণ্ডলের কাছে। পরিবারের অন্যেরা শঙ্খ থেকে শাঁখা তৈরির কাজ করলেও বাবলুর বরাবরের পছন্দ শঙ্খের উপর বিভিন্ন পৌরাণিক দৃশ্যপট ফুটিয়ে তোলা। কলকাতা, মুম্বই-সহ দেশের একাধিক শহরে কুটিরশিল্প মেলায় যোগ দেওয়ায় তৈরি হয়েছে তাঁর কাজের নিজস্ব বাজার। সরকারি বিভিন্ন বিপণন সংস্থারও বরাতও পেতে থাকেন তিনি।
এই সব কাজের মাঝেই ২০১৮-য় মনের তাগিদে বাবলু একটি শঙ্খের উপর খোদাই করে ফুটিয়ে তোলেন মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৃষ্ণের ভূমিকার বিভিন্ন দৃশ্যপট। প্রায় তিন মাসের পরিশ্রমে একটি শঙ্খের গায়ে একাধিক প্যানেলে শিল্পী ফুটিয়ে তোলেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৃষ্ণ-অর্জুনের রথযাত্রা, কৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন, কর্ণের রথের চাকা মেদিনী গ্রাস করা ও প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করে কৃষ্ণের অস্ত্র ধারণ দৃশ্য। শঙ্খের একেবারে মুখে আলাদা তিনটি প্যানেলে স্থান পায় কৃষ্ণের শঙ্খবাদন, গদাযুদ্ধ ও কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্যান্য দৃশ্যপট। খোদাইয়ের কাজ শেষে ওই বছরই জাতীয় পুরস্কারের জন্য বস্ত্র মন্ত্রকে শঙ্খটি জমা দেন তিনি। প্রায় দেড় বছর অপেক্ষার পর সোমবার কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের তরফে বাবলু জানতে পারেন, তাঁর শিল্পকর্মটি জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
বাবলু বলেন, “আমি শঙ্খ খোদাই শিল্পের কাজের জন্য বেশ কয়েক বার রাজ্য স্তরের পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি একেবারেই আলাদা।’’