—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রায় তিন মাস ধরে বকেয়া অর্থ মেলেনি। নিজেদের পকেট থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু এবং মহিলাদের জন্য বরাদ্দ খাবার রান্নার খরচ জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মীদের। সমস্যার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই জেলার কয়েকটি ব্লকের সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিকদের (সিডিপিও) স্মারকলিপি দিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাঁদে একাংশের দাবি, কবে বকেয়া টাকা মিলবে, দফতর থেকে সদুত্তর মেলেনি। এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় পাঁচ হাজারের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রয়েছে। করোনা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে গত বছর এপ্রিল থেকে পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি। অন্তঃসত্ত্বা কিংবা সদ্য মা হয়েছেন, এমন মহিলা এবং শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়ে থাকে ওই কেন্দ্র থেকে। জেলায় এমন উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ। সোম, বুধ ও শুক্রবার শিশু ও মহিলাদের দেওয়া হয় ভাত ও ডিম-আলুর ঝোল। মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শনিবার দেওয়া হয় ডিম সেদ্ধ (শিশুদের ক্ষেত্রে অর্ধেক ডিম), খিচুড়ি, সয়াবিনের তরকারি এবং আনাজ।
চাল, ডাল তেল ও নুন ছাড়া বাকি মশলাপাতি, ডিম, সয়াবিন এবং আনাজ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বাজার থেকেই কিনতে হয়। নিয়ম হল, এই বাবদ মাসে কত খরচ হয়েছে, তার হিসাব সহ বিল দিলে পরের মাসে সেই বিলের টাকা পাওয়া যায়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অভিযোগ, জুন, জুলাই ও অগস্ট— এই তিন মাসে আগেরতিন মাসের বিল বাবদ কোনও টাকা তাঁরা পাননি। ফলে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালাতে তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। ঘটনার সত্যতা মেনে নিয়েছেন সিডিপিও-দের একাংশ।
সিউড়ি, দুবরাজপুর, মহম্মদবাজার, খয়রাশোলের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনিতেই জ্বালানি বাবদ যে খরচ আসে, সেটা দিয়ে রান্না হয় না। স্বল্প মাইনের টাকা থেকে তাঁরাই মুদিখানা ও আনাজ বাজার করছেন। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে তিন মাস টাকা না-আসায় মুদির দোকানে বড় অঙ্কের ধার হয়ে গিয়েছে। দোকানদারেরা জিনিসপত্র ধারে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। কর্মীদের কথায়, ‘‘কারও কারও ২০-৩০ হাজার বা তারও বেশি টাকা পর্যন্ত ধার হয়ে গিয়েছে। যে-সব কেন্দ্রে উপভোক্তার সংখ্যা ১০০ বা তার বেশি, সেই সব কেন্দ্রের অবস্থা আরও করুণ। গোটা জেলায় এক ছবি। এ ভাবে কী করে আমরা কেন্দ্র চালাব?’’
রাজ্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়তা কল্যাণ সমিতির জেলা নেত্রী, মহম্মদবাজারের অনিন্দিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়েছি আমরা সকলে। কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে সামান্য বেতন। সেই বেতনও (কেন্দ্রের পাঠানো সাম্মানিক) সময় মতো ঢোকে না। তার পরে যদি আনাজ, ডিম ও মশলাপাতির খরচ না-পাই, তা হলে সামনের মাস থেকে পরিষেবা সচল রাখা সম্ভব হবে না।’’ এই মর্মে জেলায় শীঘ্রই স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের জেলা আধিকারিক অশোক মজুমদার ফোন ধরেননি। তবে, জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, কেন্দ্র থেকে ওই খাতে টাকা পাঠানোর পদ্ধতিতে বদলে এসেছে। একটি কেন্দ্রীয় খাতে টাকা দেওয়ার কথা। সেই টাকা সময় মতো না আসায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে, শীঘ্রই টাকা চলে আসবে বলে জানা গিয়েছে।