পাকবিড়রার মাঠ থেকে দিল্লির ত্যাগরাজ স্টেডিয়াম। কার্যত স্বপ্নের উড়ানে সওয়ার হয়ে ফুটবল ময়দান মাতালেন পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের এক আদিবাসী মেয়ে। সৌজন্যে, ‘ইউনিসেফ’। শুধু তাই নয়, মাঠে প্রাক্তন ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরের সান্নিধ্য পেয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত গোলাপি বাস্কে।
ইউনিসেফ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিল্লিতে সচিন তেন্ডুলকর একাদশ বনাম আয়ুষ্মান খুরানা একাদশের একটি ফুটবল ম্যাচ হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলোয়াড়েরা তাতে যোগ দিয়েছিলেন। আয়ুষ্মান একাদশের হয়ে মাঠে নামেন পুঞ্চার পাকবিড়রা ফুটবল অ্যাকাডেমির গোলাপি। মাঠে থাকা অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষক দয়াময় মাহাতো জানান, ম্যাচ ২-২ ফলে শেষ হয়। মিড ফিল্ডে গোলাপির খেলা সকলের নজর কেড়েছে। পুঞ্চার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রথম একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়ে দয়াময় বলেন, “ইউনিসেফের লোকজন কিছু দিন আগে পাকবিড়রায় এসেছিলেন। সেখানে আমাদের অনুশীলন দেখার পরে তাঁরা ম্যাচের বিষয়ে কথা বলেন।”
ইউনিসেফের তরফে অমিতাভ দাস জানান, পাকবিড়রার প্রত্নস্থল দেখতে গিয়ে ফুটবলের দলটি তাঁদের নজরে আসে। প্রচারের আলোর বাইরে ফুটবলের প্রতি নিষ্ঠার বিষয়টি ভাল লাগে তাঁদের। তাঁর কথায়, “জমি কিনে বা লোকজনের কাছ থেকে জমি সংগ্রহ করে পুরো একটা ফুটবল মাঠ তাঁরা তৈরি করেছেন। এটা তারিফ করার মতো। ভাল লেগেছিল গোলাপির খেলা। তাই তাঁকে দলে নেওয়া হয়।”
দিনমজুর পরিবারের মেয়ে গোলাপির মাঠে আসা গ্রামের দাদাদের হাত ধরে। বছর তিনেক আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মা জ্যোৎস্নার দিনমজুরির আয়ে চলে মা-মেয়ের সংসার। সংসার ছাড়া বাইরের কাজেও মাকে সাহায্য করেন পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী গোলাপি। এ দিন দিল্লি থেকে ফোনে কথা বলার সময়ে রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছিলেন গোলাপি। দু’গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষমেষ দল জিততে না-পারার দুঃখ ভুলিয়েছে সচিনের সঙ্গে ফুটবল খেলার মুহূর্তগুলি। গোলাপি বলেন, “সচিনের পা থেকে বলও কেড়েছি। দু-একবার পড়েও গিয়েছেন। সরি বলতেই বলেছেন, না না ঠিক আছে। এত ভাল লেগেছে বলে বোঝাতে পারব না। শুধু অটোগ্রাফ নয়, খেলার পরে আমার জার্সিতেও সই করে দিয়েছেন। জীবনের সব চেয়ে বড় পাওনা হয়ে রয়ে যাবে এই অভিজ্ঞতা।”