—প্রতীকী চিত্র।
করোনা-আবহে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় উদ্বেগ বেড়েছে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ নিয়েও। ঝোপঝাড়ে থাকা এক প্রকারের পোকার কামড়ে এই রোগ ছড়ায় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। চলতি বছর জুন পর্যন্ত এই রোগে মোট ১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার পতঙ্গবিদ পার্শি মুর্মু। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ জন সোনামুখীর। তিন জন বিষ্ণুপুর, দু’জন পাত্রসায়রের। এক জন করে আক্রান্ত রয়েছেন জয়পুর ও ইন্দাসে। গত বছর এই রোগে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫১ জন।
বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌরভ লো বলেন, “গরমের পরে ও বর্ষার শুরুতে সাধারণত মাইট জাতীয় পোকার কামড়েই স্ক্রাব টাইফাস হয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো হলে ভয়ের কিছু নেই।” তিনি জানান, রোগের লক্ষ্মণ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ও টাইফয়েডের মতোই। জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে-হাতে-পায়ে যন্ত্রণা, গাঁটে ব্যথা। বেশির ভাগ সময়ে পোকার কামড়ের চিহ্ন শরীরের কোথাও চোখে পড়ে। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘সাধারণত পোকার কামড়ের জায়গাটায় কালো চিহ্ন ও পাশের দু’সেন্টিমিটার জায়গা বাদামি রঙের হয়ে যায়।’’ পোকার কামড়ের ওই ধরনের চিহ্ন থাকলে অন্য পরীক্ষা না করেই ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এর চিকিৎসা করা যেতে পারে বলে জানান তিনি। তবে কামড়ের চিহ্ন ছাড়া উপসর্গগুলি দেখা দিলেই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের পরীক্ষা করতে হয়। তাতে কিছু ধরা না পড়লে ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এর পরীক্ষা করা জরুরি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এ আক্রান্ত ছিলেন ৭ জন। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ৫১। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) জগন্নাথ সরকার জানাচ্ছেন, গত বছর থেকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মতো ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ফলে, আক্রান্তদের আরও বেশি করে চিহ্নিত করা যাচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “গত বছর চিকিৎসায় সবাই সুস্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে পর্যালোচনা সভায় স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে তাঁরা গিয়ে স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে আলোচনা করবেন।”
সোনামুখী ব্লকে গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি ছিল। এ বারও জুন পর্যন্ত সেখানেই বেশি আক্রান্তের খবর মিলেছে। সোনামুখী পুরসভার প্রশাসক সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা বছরই বাড়ি-বাড়ি সচেতনতা প্রচারে পুরসভা জোর দিচ্ছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গল রয়েছে যেগুলির মালিকানা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ওই সমস্ত জায়গা সাফ করতে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়।’’ বিএমওএইচ (সোনামুখী) প্রিয়কুমার সাহানা বলেন, ‘‘ব্লকের বেশিরভাগ এলাকা জঙ্গল-ঘেরা। আমরা বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা আর জঙ্গলে যেতে হলে হাত-পা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিই সব সময়ে। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার খামতি থেকে যাচ্ছে।’
’