অমর্ত্য সেন। —ফাইল চিত্র।
নাম না-নিয়ে আরও একবার অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আবার অমর্ত্যকে ‘জমি হড়পকারী’ বলে তোপ দাগলেন তিনি। বিদেশ থেকে নোবেলজয়ীর শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বছরে কয়েক বার আসাকেও কটাক্ষ করেছেন উপাচার্য।
মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে উপাচার্যের বার্তালাপ প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই বার্তালাপের ভাষা প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বার্তালাপে উপাচার্য বলেছেন, “স্থানীয় স্বার্থান্বেষীদের পাশাপাশি এক বা দু’জন পরিযায়ী পাখির মতো যাঁরা আসেন, তাঁরাও বিশ্বভারতীর বর্তমান অস্থিরতার জন্য দায়ী। তাঁরা জমি হড়পকারী, প্রতারক এবং তাঁরা সরলমতি ছাত্রদের বিপথে পরিচালনা করছেন। তাঁরা এটা করছেন, বিশ্বভারতীর জমি অবৈধভাবে দখলে রাখার জন্য।’’
এখানেই ক্ষান্ত হননি উপাচার্য। নাম না-করে অমর্ত্যকে আক্রমণ করে বার্তালাপে বলা হয়েছে, ‘‘পাশ্চাত্যে নিজেদের বাজারদর বাড়ানোর লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের কথা তাঁরা বিশেষ ভাবে স্থাপন করতে আগ্রহী। তিনি ভাবেন, তিনিই হলেন রবীন্দ্রনাথের দর্শনের স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী। উনি বিশ্বভারতী থেকে শুধু নিয়েছেন, কখনও একটি নয়া পয়সাও বিশ্বভারতীর উন্নতির জন্য দেননি।”
এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একাংশকেও আক্রমণ করেছেন উপাচার্য। তাঁর দাবি, ‘লভ্যাংশের’ আশায় বিশ্বভারতীর কিছু শিক্ষক এই ‘পরিযায়ীদের জুতো চাটেন’! নিজেদের লাভের উদ্দেশ্যে কিছু ছাত্র-শিক্ষক বিশ্বভারতীর ক্ষতি করার কাজে শামিল হয়েছেন বলে উপাচার্যের অভিযোগ। বার্তালাপে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতীর থেকে মোট বেতন পাওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকদের অনেকের শিক্ষকতা ও গবেষণার মান সন্তোষজনক নয়।”
এই বার্তালাপ সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বভারতীতে। বিশ্বভারতীর সঙ্গে অমর্ত্য সেনের ১৩ ডেসিমাল জমি নিয়ে বিবাদ চললেও কেন নোবেলজয়ীকে এমন ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ করা হবে, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “অমর্ত্য সেনের মতো মানুষকে উপাচার্য অনেক দিন ধরেই আক্রমণ করে চলেছেন। এর থেকে বোঝা যায়, উনি শ্রদ্ধেয়কে শ্রদ্ধা দিতে জানেন না। উনি যত দিন থাকবেন, এ রকম ভাষাতেই সকলকে আক্রমণ করে যাবেন।” বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অমর্ত্য সেন সম্পর্কে উপাচার্য বারবার যে ভাষা প্রয়োগ করে চলেছেন, তা ওঁর মানসিক অসুস্থতাই প্রমাণ করে। শিক্ষকদেরও প্রতিনিয়ত যে-ভাবে অপমান করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে উনি এই পথে থাকার সমস্ত যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।”