অমরদীপ টুডু।
সাঁওতালি মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষে ছিলেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকা প্রকাশিত না হলেও সাঁওতালি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধের তিলাবাইদ গ্রামের বাসিন্দা অমরদীপ টুডু সামনের দিকে রয়েছেন বলে দাবি স্কুলের।
অমরদীপ শালতোড়ার চাঁদড়া কল্যাণ সঙ্ঘ হরিজন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৪০। সর্বোচ্চ নম্বর ভূগোলে পেয়েছেন ৯৭। উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু ভূগোল ও দর্শনের জন্য তিনি টিউশন নিয়েছিলেন। বাকি বিষয়গুলি স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই পড়েছেন। অমরদীপ বলেন, “আগামী দিনে ভূগোল নিয়ে পড়তে চাই। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করার ইচ্ছা রয়েছে আমার।”
চিন্তা তাঁক পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে। অমরদীপের বাবা মণীন্দ্র টুডু সরকারের থেকে পাট্টা পাওয়া সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালান। সেই কাজে তাঁর মা ময়নাদেবী। অমরদীপের দাদা সুদীপ্তর মুদিখানা দোকান রয়েছে। নিজের রোজগার থেকেই তিনি ভাইয়ের পড়াশোনায় সাহায্য করেন।
এই কৃতীর পরিবারের আশঙ্কা, এত দিন সরকারি আবাসিক স্কুলে রেখে পড়াশোনা করানোয় তেমন খরচ ছিল না। কিন্তু কলেজে উচ্চশিক্ষার খরচ অনেক। সেই খরচ টানা অমরদীপের পরিবারের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েই চিন্তা দানা বেঁধেছে।
চাঁদড়া কল্যাণ সঙ্ঘ হরিজন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুব ছোট থেকে অমরদীপকে দেখছি। নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ রয়েছে তাঁর মধ্যে। অলচিকি হরফে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়ানো রাজ্যের স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে অমরদীপই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। তাঁর এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।”
তাঁর সংযোজন, “অমরদীপের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। এত দিন স্কুলে তেমন খরচ না থাকলেও উচ্চশিক্ষার খরচ রয়েছে। বড় রকম সাহায্য ছাড়া তাঁর পক্ষে উচ্চশিক্ষা কত দূর সম্ভব, কে জানে!’’
চিন্তিত অমরদীপও। তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষার খরচ বাড়ির লোকজনের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তাই এখন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু কাজের ব্যবস্থা করার খোঁজ করছি।’’