রামচন্দ্র ডোমের নেতৃত্বে মহম্মদবাজারে বাম-কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র
দেখলে মনে হবে শিয়রে ভোট!
বাম-কংগ্রেস নেতারা পাশাপাশি বসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। যৌথ মিছিল করছেন। চড়া রোদে তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে সেই মিছিলে হাঁটছেন অন্তত বারোশো কর্মী-সমর্থক (পুলিশ বা তৃণমূলের হিসেবে সংখ্যাটা মেরেকেটে অর্ধেক হতে পরে)।
তা হলে ব্যাপারটি কী?
দু’দলের নেতারাই জানালেন, আর কিছু না! ভোটের পরেও আন্দোলন-প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন তাঁরা। সিপিএমের এক জেলা নেতা মনে করিয়ে দিলেন ১৭ এপ্রিল, ভোটের সেই রাতের কথা। রাত আটটা নাগাদ, মহম্মদবাজারের কাটপাহাড়ি গ্রামে তিন তৃণমূল সমর্থক ও তাঁদের পরিবারকে মারধর করে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সেকেড্ডা, গনপুর ও ভাঁড়কাটা অঞ্চলে পাল্টা হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সময় পঞ্চশহীদ এলাকায় সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক সুশীল ঢেঙরের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ জানায়।
লোকাল কমিটির সম্পাদকের বাড়িতে হামলার সেই ঘটনায় শুক্রবার ভরদুপুরে গনপুরে প্রতিবাদ সভা করে সিপিএম। তাতে যোগ দেয় কংগ্রেসও। সভা থেকে শাসকদলকে সংযত হওয়ার বার্তা দেন বাম-কংগ্রেস নেতারা। এরপরেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘হিংসার রাজনীতি বন্ধ না হলে এর ফল ভাল হবে না।’’ সভামঞ্চে তখন রয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা এলাকার প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম, জেলার প্রাক্তন মন্ত্রী তপন রায় জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা সুনীল রায়, কংগ্রেস নেতা তথা রামপুরহাটের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের সৈয়দ সিরাজ জিম্মির নির্বাচনী এজেন্ট সত্যব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সাঁইথিয়া বিধানসভার বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী সিপিএমের ধীরেন বাগদি।
সুশীলবাবুর বাড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘শাসক দলের হিংসার রাজনীতির অবসান ঘটাতে কংগ্রেসের সঙ্গে ধর্ম নিরপেক্ষ জোট গড়ে উঠেছে। মনে রাখবেন, সব কিছুর শেষ আছে। হিংসার রাজনীতি বন্ধ করুন। না হলে মানুষ কিন্তু এ বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’’ হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। একই সুরে আক্রমণ শানান কংগ্রেস নেতারাও।
প্রশ্ন হল, ভোটের পরেও কেন?
সিপিএম নেতারা একান্তে বলছেন, ‘‘আর কিছুই না। ভোটের আগে শুরু হওয়া প্রতিবাদের ঝোঁক, নানা বিষয়ে আন্দোলনে যাওয়ার সেই ধারাটাই জ্যান্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ দলের এক জেলা নেতা তা কবুল করে যোগ করছেন, ‘‘এবং সেটা কংগ্রেসের সঙ্গে, যৌথ ভাবে।’’ বস্তুত, ভোটের আগে কংগ্রেসের সমঝোতা অক্সিজেন জুগিয়েছে সিপিএমকে। এমন বহু এলাকা রয়েছে যেখানে গত পাঁচ বছরে কার্যালয় খুলতে না পারলেও ভোটের মুখে সে কাজ করে দেখিয়েছে সিপিএম। নানুর, ইলামবাজারের মতো এলাকায় বড়সড় মিছিলও করেছে। তাতে সাড়া পেয়েই ওই পরিকল্পনা বলে খবর।