অভিযোগ পত্র। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী গৃহ নির্মাণ যোজনায় বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্যার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি মুরারই ১ নং ব্লকের ভাদীশ্বর এলাকার। অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই অনিতা রবিদাস মুরারই পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর সংসদের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্যা। গত বার ভোটে তিনি কংগ্রেসের হয়ে জিতেছিলেন। পরে দল বদলান। বিডিও-র কাছে এক উপভোক্তা ওই সদস্যার নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অনিতাদেবী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভাদীশ্বরেই বাড়ি ওই পঞ্চায়েত সদস্যার। সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, অনেক দিন ধরেই অনিতাদেবী বেশ কয়েক জন উপভোক্তার বাড়ি তৈরির টাকা আত্মসাৎ করছেন। এত দিন এই নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও গত ১২ অক্টোবর আলো ভুঁইমালি নামে স্থানীয় এক মহিলা বিডিও-র (মুরারই ১) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তা হিসাবে তাঁর নাম ওঠে। ওই যোজনায় উপভোক্তারা তিন দফায় মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পান। সেই সময় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তিনি দু’কিস্তিতে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে বাড়ির কাজ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু, ২০ হাজার করে দু’বারে মোট ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেন অনিতা রবিদাস।
সম্প্রতি আলোদেবীর অ্যাকাউন্টে বাড়ি তৈরির বাকি ৪০ হাজার টাকা ঢোকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার জবকার্ডও ওই পঞ্চায়েত সদস্যার কাছে আছে। কার্ড ছাড়া টাকা ওঠানো সম্ভব নয়। কার্ড ফেরত দিতে বললে উনি আমার কাছে আবার টাকা দাবি করেন। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে বিডিও-কে সব জানিয়েছি।’’
আলোদেবীর অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই এলাকায় আরও অনেকে ওই পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। রবি ভুঁইমালি, জগৎ ভুঁইমালি, নমিতা লোহার-সহ বেশ কয়েক জন মিলে ২৬ তারিখ বিডিও-র কাছে অনিতাদেবীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ভাদীশ্বরের বঙ্কিমপল্লি, ষষ্টিতলাপাড়ার অনেক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘আমরা প্রকৃতই গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। বর্ষাকালে প্রচণ্ড কষ্টে দিন কাটাতে হয়। সরকার আমাদের বাড়ি জন্য অর্থ বরাদ করলেও পঞ্চায়েত সদস্য আগে থেকে বলে রেখেছেন যে, তিনি ঘর পাইয়ে দেবেন, কিন্তু টাকা লাগবে।’’
বিডিও নিশীথ ভাস্কর পাল বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আইনানুযোগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মুরারই পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সন্তোষ পিঁপাড়া জানান, অভিযোগ সত্যি দল যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।
সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অনিতা রবিদাস। তাঁর পাল্টা, ‘‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছেন বিজেপির কিছু লোক। আমার দল আমাকে দুর্নীতি করতে শেখায়নি। সত্য ঘটনা কী, এক দিন সবাই বুঝতে পারবে।’’ এ কথা জেনে বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি সুধীররঞ্জন দাস গোস্বামী বলেন, ‘‘ওই এলাকার সাধারণ মানুষই এগিয়ে এসে ওই পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। আমাদের দলের কেউ সেই অভিযোগ করাতে যায়নি। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে নামব।’’
মুরারই ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘গরিবদের কথা মাথায় রেখেই আমরা সংগঠন করি। ভাদীশ্বর এলাকার কিছু বাসিন্দা এ ব্যাপারে আমার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। দলের তরফেও তদন্ত হবে। তদন্তে যদি দেখা যায় দুর্নীতিতে দলের কেউ জড়িত, তা হলে জেলা নেতৃত্বকে জানাব। তাঁরা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।’’