তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর ভাড়া করা ঘর দখল করে দলীয় কার্যালয় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। তালড্যাংরা থানার পাঁচমুড়ার ওই ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলও প্রকাশ্যে এসেছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী পাঁচমুড়ায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কৃষি সহায়ক যন্ত্র মেরামতির ব্যবসা করছিলেন। সেই ঘরটিই দখল করে বাঁকুড়া জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী আদরি সেন দলীয় কার্যালয় খুলেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই ব্যবসায়ী। সোমবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানা এবং বিডিও-র কাছে আদরিদেবীর বিরুদ্ধে ঘর দখল করার অভিযোগ জানান তপন দে নামে ওই ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, “পাঁচমুড়ায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে আমি কৃষি সহায়ক যন্ত্র সারাইয়ের ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু, ব্যবসা কিছু দিন বন্ধ ছিল। মাস দুয়েক আগে আদরিদেবী আমাকে এসে বলেন কয়েক বস্তা সিমেন্ট তিনি ওই ঘরে রাখতে চান। আমি রাজি হয়ে তাঁর হাতে ঘরের চাবি তুলে দিই। এর পর দেখি সিমেন্ট রাখার বদলে তিনি ঘরটিকে মহিলা তৃণমূলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, এরপর একাধিক বার ওই ঘর ছাড়তে বলা হলেও ওই তৃণমূল নেত্রী সেই কথা শোনেননি। উল্টে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। শেষে মঙ্গলবার রাতে মহিলা তৃণমূলের অফিস বন্ধ থাকাকালীন তিনি ওই ঘরের দরজায় নিজের একটি তালা লাগিয়ে দেন বলেও দাবি তপনবাবুর।
আদরিদেবী অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে এই ঘটনার পিছনে স্থানীয় পাঁচমুড়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি উত্তম গরাইয়ের উস্কানি রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ তুলছেন। তৃণমূল নেত্রীর আরও দাবি, ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসিক ৫০০ টাকার চুক্তিতে তিনি ঘরটি ভাড়া নিয়েছেন। মাসে মাসে সেই ভাড়া দেওয়াও হচ্ছে। আদরিদেবী বুধবার অভিযোগ করেন, “এখানকার অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি উত্তম পাঁচমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে অন্ধকারে রেখে পঞ্চায়েতের কিছু গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করায় শনিবার রাতে উত্তম লোকজন নিয়ে চড়াও হন। আমার অফিসে হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর করা হয়। সেদিনই আমাকে এলাকা থেকে উৎখাত করার হুমকিও দিয়েছিলেন উত্তম।’’ তাঁর আরও দাবি, উত্তমই ওই ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জোর করে অভিযোগ করিয়েছেন। তিনি দলের জেলা সভাপতিকে সব জানিয়েছি।
আদরিদেবীর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন উত্তমবাবু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “গ্রাম পঞ্চায়েতে নিজের প্রভাব বাড়াতে সম্প্রতি নানান অনৈতিক কাজ শুরু করেছেন আদরি। পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা তাঁর ভয়ে অফিসে আসছেন না। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম বলে শনিবার রাতে পাঁচমুড়ার আইএনটিটিইউসি-র অফিসে লোকজন নিয়ে এসে আমার উপরে হামলাও চালিয়েছিলেন আদরি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “দলের নাম করে এলাকায় তোলাবাজি করছেন ওই তৃণমূল নেত্রী। ওই ব্যবসায়ীর ভাড়া করা ঘর অন্যায় ভাবে দখল করে নিয়েছেন। এই সব দল সমর্থন করবে না।’’ অন্য দিকে, আদরিদেবী মাসে মাসে ভাড়া দেন বলে যে দাবি করছেন, তা মানতে রাজি নন ব্যবসায়ী তপনবাবু। তাঁর কথায়, “টাকার বিনিময়ে আদরিদেবীকে আমি ঘর দিইনি। উনি কোনও ভাড়াও দেন না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তালড্যাংরার বিডিও উজ্বলকুমার বিশ্বাস বলেন, “আমি সদ্য এই ব্লকে যোগ দিয়েছি। কোথাও ঘর দখল করার মতো কোনও অভিযোগ এখনও পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়, এর আগেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তালড্যাংরায়। সম্প্রতি একটি আদিবাসী সমবায়ের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের কাছে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের হারের পিছনেও ব্লকের তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের দ্বন্দ্বই অন্যতম কারণ ছিল বলে দাবি করেছিল দলেরই একাংশ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ অবশ্য বলেন, “জেলায় কোথাও এর আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘর দখল করে দলীয় কার্যালয় গড়ার অভিযোগ ওঠেনি। পাঁচমুড়ায় কী হয়েছে, তা বিশদে খোঁজ নেব। দলের শৃঙ্খলা কেউ ভাঙলে ছাড় পাবে না।’’