প্রতীকী ছবি।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় প্রচুর নতুন ভোটার বুথে যেতে চলেছেন। সেই ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরা এখন অন্যতম লক্ষ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এক দিকে, নতুন ভোটারদের মোবাইল নম্বর জোগাড়ে ব্যস্ত তৃণমূল। বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ব্রিগেড’ বানিয়ে নতুনদের দিয়ে নতুনদের বোঝানোর। বাম শিবির অবশ্য ভরসা রাখছে বর্তমান পরিস্থিতির নানা সমস্যা তুলে ধরে নিয়মিত আন্দোলনের উপরেই।
সদ্য সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা জুড়ে সার্বিক ভাবে নতুন ভোটার বেড়েছেন ৯০ হাজার ৯৮২ জন। যা মোট ভোটারের ৩.১৪ শতাংশ।
জেলার বারোটি বিধানসভা। পরিসংখ্যান বলছে, তার মধ্যে রানিবাঁধ ও বাঁকুড়া ছাড়া, বাকি সব কেন্দ্রেই তিন শতাংশের বেশি নতুন ভোটার রয়েছেন। যা দেখে জেলার প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই মানছেন, এ বার ভোটে তরুণ প্রজন্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলছে।
নতুন ভোটার কারা হতে চলেছেন, সে দিকে প্রথম থেকেই নজর রাখছিল তৃণমূল ও বিজেপি। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা জানান, নতুনদের তালিকায় নাম তুলতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য তৃণমূলের বুথ কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আবেদনপত্র পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন। নতুন ভোট দিতে চলা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে তৃণমূল কর্মীরা ফেসবুক পেজে তাঁদের ছবিও পোস্ট করে অভিনন্দন জানান। শ্যামলবাবু বলেন, “আমি নিজেই আমার ফেসবুক পেজে নতুন ভোটারদের ছবি পোস্ট করে
উৎসাহ দিয়েছি।”
বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র জানান, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে প্রত্যকেটি বুথে বিজেপি কর্মীরা সাধারণ মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সাহায্য করেছেন। সেখানে নতুন ভোটারদের বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নাম উঠেছে। এ বার ভোটও পড়বে। নতুনদের মন জয় করাটাই এখন অন্যতম লক্ষ দলগুলির। জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামলবাবু বলেন, “আমরা জেলা জুড়ে ‘ঘরে চলো’ কর্মসূচিতে নামছি। প্রত্যেকটি ঘরে গিয়ে গিয়ে নতুন ভোটারদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি, শিক্ষার অগ্রগতিতে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা নতুন ভোটারদের বোঝাচ্ছি।”
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেকানন্দবাবু বলেন, “প্রত্যেকটি মণ্ডলে আমাদের কর্মীদের বাড়ির যে তরুণ-তরুণীরা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে আমরা ‘নব্য ভোটার ব্রিগেড’ গড়ব। ওই ব্রিগেডের সদস্যেরাই নতুন ভোটারদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলবেন। এ নিয়ে প্রতিটি মণ্ডলকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।” তাঁরা জোর দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরায়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি অবশ্য বলেন, ‘‘নতুন ভোটারদের সংখ্যা এ বার সত্যিই নির্বাচনে ছাপ ফেলবে। তবে আলাদা করে তাদের টানতে বিশেষ কৌশলের বদলে, আমরা রাজ্যের বর্তমান সমস্যাগুলিকে রাজ্যের মানুষের সামনে তুলে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।” জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন ভোটারেরা যাতে ভোট দানে এগিয়ে আসেন, এবং ভোটটা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেন, সে নিয়ে আমরা প্রচার করব।’’
কী বলছেন নতুন ভোটারেরা? বড়জোড়ার কলেজপড়ুয়া অপূর্ব মণ্ডল বলেন, “এলাকার রাস্তাঘাট, হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সে কাজে আরও গতি চাই। রাজ্যে বেকারত্ব দূর ও উন্নয়নের কাজ তরান্বিত করার লক্ষ্যেই ভোট দেব।” বড়জোড়ার কলেজপড়ুয়া সায়ন রায় বলেন, “ভোট নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। আমি চাই, সমাজে এখনও যাঁরা নিম্নবিত্ত, তাঁরা যেন স্বাবলম্বী হয়ে মধ্যবিত্ত হন। বেকারত্ব যেন না থাকে।”