প্রতীকী ছবি।
ভিটে-মাটি খোয়ানোর ভয় মানুষের মনে এমন জাঁকিয়ে বসেছে, সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কারও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে গেলেই এলাকাবাসীর মিলিত ক্ষোভের শিকার হতে হচ্ছে। জেলায় কয়েক দিন ধরে চলা ঘটনাক্রম চোখে আঙুল দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে বেরোতে পারে এই আশঙ্কায় সতর্ক জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে এমন প্রয়োজনীয় কর্মসূচিও নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে এলাকায় মাইকে প্রচার করে, লিফলেট ছড়িয়ে মানুষের ভয় দূর করতে হবে। জেলাশাসকের এই নির্দেশ পৌঁছেছে জেলার প্রতিটি ব্লকের বিডিও-র কাছে। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘প্রচারে বলতে হবে এনআরসি, সিএএ-র সঙ্গে ওই কর্মসূচির কোনও সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া এমন কিছু কর্মসূচি, যার সঙ্গে সমীক্ষার বিষয় জড়িয়ে, তা সেটা সরকারি বা বেসরকারি যে উদ্যোগেই হোক না কেন, সেই কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’’
আরও একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন ভোটার তালিকায় নাম তোলানো, তালিকায় সংশোধন-বিয়োজন ও বাড়িতে বাড়িতে সংশোধিত নতুন কার্ড পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে। পুরানো ভোটার কার্ড যাঁদের রয়েছে, সেগুলি ফেরত নিয়ে সংশোধিত ভোটার কার্ড বিলি করতে গেলেও কেউ কেউ মনে করছেন এর মধ্যে কোনও ছল রয়েছে। এনআরসি, সিএএ-র আতঙ্ক কাটিয়ে কী ভাবে বিভিন্ন কাজ এগিয়ে নিয়ে যায় তা নিয়ে কপালে ভাঁজ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী, মহিলা স্বনির্ভর দলের কর্মী বা স্বনির্ভর দলসমূহের মাথায় থাকা সঙ্ঘ সমবায়ের দায়িত্বে থাকা সিএসপি বা ‘কমিউনিটি সার্ভিস প্রোভাইডার’ বা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করা যে কেউ কোনও কাজ করার আগে আতঙ্কে ভুগছেন। ডিআরডিসি-র এক আধিকারিকও বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত তথ্যের প্রয়োজন এমন কর্মসূচি এখন বন্ধ।’’ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অনেক সিএসপি বাড়ি ছেড়েছেন। মুরারই ২ বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস মানছেন, ‘‘ব্লকের দুই জন সিএসপি ভয়ে গ্রামে আসতে পারছেন না। সচেতন করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালাচ্ছি। খুব শীঘ্রই মানুষ জন বুঝতে পারবে।’’
মুরারইয়ের মিত্রপুরের এক সিএসপি জানালেন, আতঙ্কে আছেন। তাঁর বাড়িতেও গ্রামবাসী এসেছিলেন। তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠালেও ফের আসতে পারেন, এমন ভয় আছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মতোই অবস্থা মুরারই ২ ব্লকের সকল সিএসপির।’’ অভিযোগকারী মহিলাদের অবশ্য দাবি, ‘ইন্টারনেট সাথী’ প্রকল্পে কোথাও আধার কার্ড নম্বর দিতে হয় না। তার পরেও কেন আধার কার্ডের নম্বর নেওয়া হল? অনেক সিএসপিই নাকি সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। মোবাইল প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই বিষয়টিও অনেককে বলা হয়নি বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারী মহিলারা। তাঁদের আরও দাবি, ‘‘বাড়িতে এসে ওই মহিলারা কখনও বলেছেন বিডিও অফিস থেকে পাঠিয়েছে, আবার অন্য কাউকে পঞ্চায়েত থেকে পাঠিয়েছে।’’
প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, গুজব তাতে আরও বেড়েছে। বিডিও (নলহাটি ১) জগদীশচন্দ্র বাড়ুই বলেন, ‘‘গুজব রুখতে ব্লক থেকেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। প্রসূতি মায়েদের জন্য আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের খোঁজ নেয়। বাচ্চা হওয়ার পরে মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকার চেক ঢোকে। তার জন্য আধার কার্ড আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিতে হয়। গুজবের জেরে সেই কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।’’