উত্তপ্ত: উপাচার্যের দফতরে তালা ভাঙার চেষ্টা পড়ুয়াদের। শনিবার বিশ্বভারতীতে। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বভারতীর এক জন কর্মীকে কলকাতার গ্রন্থন বিভাগে বদলির প্রতিবাদে শনিবার নিজের অফিসে উপাচার্যকে তালাবন্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠল। তাঁর অফিসের সামনে চলল বিক্ষোভও।
এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের ঘরের সামনে বদলি হওয়া কর্মী অর্ক দাসকে সঙ্গে নিয়ে কর্মিসভার সদস্যরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিশ্বভারতীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মী অর্কবাবুকে কলকাতায় গ্রন্থন বিভাগে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর কর্মিসভার সভাপতি গগন সরকারের অভিযোগ, ‘‘সপ্তম পে কমিশনের বকেয়া ফিরিয়ে দেওয়া-সহ অন্যান্য বেশ কিছু দাবি নিয়ে ১৯ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন কর্মিসভার সদস্যরা। সেই অবস্থান-বিক্ষোভেও সামিল ছিলেন ওই কর্মী। আমাদের অনুমান, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল থাকায় অর্কবাবুকে বদলি হতে হয়েছে। ওঁর মায়ের শরীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই সময়ে তাঁকে কলকাতায় বদলি করা হলে যে কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বদলির আদেশ প্রত্যাহার করা হোক এই আবেদন জানাচ্ছি।’’
এ দিকে যখন কর্মিসভার সদস্যরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সেই সময়ে পৌষমেলা নিয়ে একটি বৈঠকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান বিশ্বভারতীর কর্মী মণ্ডলী, কর্মী পরিষদের কিছু সদস্য এবং পড়ুয়াদের কয়েক জন। উপাচার্যের দফতরে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখানো কর্মিসভার সদস্যদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। কথা-কাটাকাটি থেকে প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হয়।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁরা অন্য একটি দরজা দিয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢোকেন ও বৈঠক করেন। কেন তালা লাগানো হয়েছে, তা নিয়ে কর্মিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে সরব হন কর্মী মণ্ডলী ও কর্মী পরিষদের সদস্যরা। কর্মী মণ্ডলীর একাংশ অভিযোগ করেন— ‘‘উপাচার্যের দফতরে তালা লাগিয়ে দিলেন কেন এক দল কর্মী? উপাচার্যকে এ ভাবে ঘেরাও করে রাখা মানে বিশ্ববিদ্যালয়কে অসম্মান করা। বদলি নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে তার জন্য তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে বিশ্বভারতীর মুখ পোড়ানো ছাড়া লাভ হল না কিছু।’’ অন্য দিকে, উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কর্মিসভার সদস্যরা। কর্মিসভার সভাপতির বক্তব্য, ‘‘আমরা তালা দিইনি। আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। সাড়া পাইনি। আমাদের হেনস্থা করা হয়েছে। উপাচার্যের নিরাপত্তারক্ষীরাই গেটে তালা দিয়েছেন।’’ যাঁকে নিয়ে এই বিক্ষোভ এবং কর্মীদের মধ্যে তরজা, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সেই কর্মী অর্কবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও বদলির নির্দেশ হাতে পাইনি, শুনেছি বদলি করা হয়েছে আমাকে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পেলাম না।’’
এই ঘটনা নিয়ে শনিবার দিনভর বিশ্বভারতী সরগরম থেকেছে। কর্মিসভার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুব্রত মণ্ডল এখন কর্মী মণ্ডলীর সদস্য। তিনিও এ দিন উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কর্মিসভার সদস্যরা তালা লাগিয়ে উপাচার্যের দফতরে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন তার তীব্র নিন্দা করছি। মেলা নিয়ে বৈঠকের জন্য উপাচার্য আমাদের আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। যথাসময়ে এসে দেখি, দফতরে তালা ঝুলছে। আমাদের বাধা দেওয়া হয়। তালা না ভেঙে অন্য দরজা দিয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢুকি।’’
বিশ্বভারতী ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বিকাশচন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও বিষয়ে সমস্যা থাকতেই পারে, তা বলে জোর খাটিয়ে কোনও কিছু বন্ধ করে দেওয়া আমরা একেবারেই সমর্থন করি না।’’ পৌষ মেলা নিয়ে বৈঠক থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত ঘেরাও মুক্ত হন উপাচার্য। এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মীদের বদলি করা হয়ে থাকে। সে রকমই এটি একটি রুটিন বদলি। বদলি নিয়ে যে গুন্ডাগিরি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’