পুরুলিয়া পুরসভায় শহরের বিভিন্ন এলাকার মহিলারা। —নিজস্ব চিত্র
তীব্র গরমে ঝলসে যাচ্ছে জেলা। সঙ্কট বাড়িয়েছে পানীয় জলের আকাল। জল চেয়ে অবরোধ-বিক্ষোভ বারবার হচ্ছে পুরুলিয়ার নানা প্রান্তে। এ বার সেই বিক্ষোভের আঁচ পড়ল পুরুলিয়া পুরসভায়। ‘জল দাও, জল দাও, এই গরমে তৃষ্ণার জল নেই’— এমন স্লোগান তুলে বুধবার পুরসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখালেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। এ দিন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের মহিলারা। এই অবস্থায় পুর-কর্তৃপক্ষ এই সঙ্কটের জন্য ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’কেই দায়ী করছেন।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দু’দিন জলের দাবিতে শহরের দুই প্রান্তে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করেছিলেন বাসিন্দারা। যানজটে ফেঁসে নাকাল হয়েছিলেন অসংখ্য যাত্রী। এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভের জেরে শিকেয় ওঠে পুরসভার কাজকর্ম। ঘটনা হল, গ্রীষ্মে ফি বছরই জলকষ্টে পড়তে হয় পুরুলিয়াকে।
কিন্তু, গত অগস্টের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ বার ছবিটা আরও ভয়াবহ। কুয়ো শুকিয়ে গিয়েছে। দিন দিন জলস্তর নামতে থাকায় নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়ছে। এমন খবর প্রশাসনের কাছে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। এই অবস্থায় জলের জন্য মানুষ কোথায় যাবে, এই প্রশ্ন তুলেই এ দিন শহরের সিপিএম নেতা-কর্মীরা পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান। ছিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, বিনায়ক ভট্টাচার্য, দলের জেলা কমিটির সদস্য সৌম্যনাথ মল্লিক এবং আরএসপির জেলা সম্পাদক অত্রি চৌধুরী। কংগ্রেস কাউন্সিলর সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও বিক্ষোভে সামিল হন।
বিক্ষোভকারীরা জলের সমস্যা সমাধানের দাবিতে উপ-পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা করবেন দাবি তুললে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে কয়েক জনের ঠেলাঠেলিও হয়। শেষমেশ উপ-পুরপ্রধানের ঘরের বারান্দা থেকেই তাঁরা ‘জল চাই, জল চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিনায়কবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে মানুষ এই গরমে পানীয় জলটুকু পর্যন্ত পাচ্ছে না। তাঁদের হয়ে সেই দাবি নিয়েই আমরা পুরসভার কাছে এসেছি। এই গরমে জল না পেলে মানুষ কোথায় যাবে? এত দিন তো শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কংসাবতীই মানুষকে তৃষ্ণার জল জুগিয়েছে। আজ কেন জল পাওয়া যাবে না?’’
তিনি জানান, গত পুরভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল, পানীয় জলের সমস্যা মিটে যাবে বলে। কীসের ভিত্তিতে সেই প্রতিশ্রিতি দেওয়া হয়েছিল, সেটাই তাঁরা পুরসভার কাছে জানতে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডের অনেক মহিলা স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন জলের দাবিতে।’’ সেই মহিলাদেরই অন্যতম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরতি বাউরি, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মানসী দাস বা ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আসমান বিবিদের ক্ষোভ, ‘‘জল নেই। কলে জল আসছে না। নলকূপ থেকেও জল উঠছে না। নিয়মিত ট্যাঙ্কারও যাচ্ছে না। তা হলে কোথায় জল পাব আমরা?’’
বামফ্রন্টের নেতা বিভূতি পরামানিকের দাবি, পুরসভাকেই নিশ্চিত করতে হবে, মানুষ কোথা থেকে ও কী ভাবে জল পাবেন। এই সমস্যার সুরাহা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটা হবে বলে পুরসভাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস কাউন্সিলর সুদীপবাবু বলেন, ‘‘এ বছর বৃষ্টি হয়নি বলে জলের সঙ্কটের ছবিটা আরও ভয়াবহ। কিন্তু এই অবস্থা যে হতে পারে, সেটা তো পুরসভার আগাম বোঝা উচিত ছিল। সেই ভাবে আগাম পরিকল্পনা করাও দরকার ছিল। পুরুলিয়া শহরের আশপাশে যে সমস্ত জলাধার আছে, সেগুলির সংস্কার করে সেখান থেকে জল আনা যেতে পারত। কিন্তু সেরকম কোন ভাবনাই নেই।’’
উপ-পুরপ্রধান সামিমদাদ খানের দাবি, পুরসভার আন্তরিকতার কোনও ত্রুটি নেই। দিনরাত তাঁরা শুধু জল সমস্যার সুরাহা নিয়েই পড়ে রয়েছেন। টানা এতগুলি মাসের অনাবৃষ্টির ফলে কংসাবতীর জলস্তর একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। প্রয়োজনের জলটুকুও উঠছে না। যেটুকু জল মিলছে, সেটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘যে সমস্ত ওয়ার্ডে চাহিদা বেশি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেখানে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল দেওয়া হচ্ছে। এমন নয় যে পুরসভার গাফিলতির কারণে কোথাও জল মিলছে না। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে আমরা কী করতে পারি! এখানে আমরা সত্যিই অসহায়।’’