উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোতেই শুক্রবার রামপুরহাটে বিক্ষোভ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে বৃহস্পতিবার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফল নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিক্ষোভ হল জেলার দুই স্কুলে। উত্তীর্ণ হতে না-পেরে বোলপুরের শৈলবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখান ৪২ জন পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বাংলা ও ইংরেজি, এই দু’টি বিষয়ে ঠিকঠাক নম্বর না দেওয়ায় তাঁদের অকৃতকার্য হতে হয়েছে।
একই ভাবে এ দিন রামপুরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছাত্রীরা। অভিভাবকদের একাংশও বিক্ষোভে শামিল হন। ছাত্রীরা একাদশে শ্রেণির পরীক্ষার খাতা দেখানোর দাবি জানান। বিকেল পর্যন্ত ঘেরাও-বিক্ষোভ চলে। শিক্ষিকাদের ঘরে তালা দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত স্কুলে পুলিশ ডাকতে হয়।
শুক্রবার দুপুরে বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকার শৈলবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের হাতে মার্কশিট তুলে দেওয়া হয়। মার্কশিট হাতে পাওয়ার পরে অনেকেই হিসাব মেলাতে পারেননি। পরীক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, কাউকে একটি বিষয়ে, কাউকে দু’টি বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাতেও তাঁদের ঠিকমতো নম্বর দেওয়া হয়নি বলে অনেক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ। প্রিয়া দে, সুপ্রিয়া বাঘ, পুষ্পিতা সাহারা বলেন, “আমাদেরকে বাংলা ও ইংরেজিতে কেন নম্বর কম দেওয়া হয়েছে, তা বুঝতে পারছি না।’’ পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা কিংবা উত্তীর্ণ করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। রাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে এ বার পাশের হার ৯৭.৬৯ শতাংশ। রাজ্যের পাশের হারকে ছাপিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে জেলায় পাশের হার ৯৮.৫৬ শতাংশ। সেখানে একটি স্কুলে এক সঙ্গে এত জন পরীক্ষার্থীর অনুত্তীর্ণ হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিন গফায় দফায় বিক্ষোভের পাশাপাশি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দরজার সামনে অনেককে ধর্নায় বসে পড়েন। অভিভাবক পলি সাহা, মিঠু দে, মালা পাল বলেন, “আমাদের মেয়েদের ভবিষ্যৎ এখন কী হবে, আমরা তা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১৪৮। তাঁদের মধ্যে ১০৬ জন পাশ করেছেন। প্রধান শিক্ষিকা রুবি ঘোষ বলেন, “ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের পুরো রেজাল্ট মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে হয়েছে। আমরা প্র্যাকটিক্যালেও পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট নম্বর দিয়েছি। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ উচ্চশিক্ষা সংসদকে জানাব।’’ ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অংশু কুমার ঘোষ বলেন, “গত বছর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বহু ছাত্রীর ফল খারাপ হয়েছিল। তার পরেও করোনা পরিস্থিতিতে বোর্ডের নির্দেশ মতো তাদেরকে পাশ করিয়ে দিতে হয়। সে কারণেই এমন ফল হয়েছে।’’
অন্য দিকে, রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এ বার পরীক্ষার্থী ৩৩৭ জন। এঁদের মধ্যে মাত্র ৮ জন ছাত্রীই অনুত্তীর্ণ। কিন্তু, উত্তীর্ণদের বড় অংশের অভিযোগ, একাদশ শ্রেণির কোনও বিষয়ের খাতা স্কুল কর্তৃপক্ষ না দেখেই গড়পড়তা নম্বর দিয়েছেন। ফল খারাপ হওয়ার জন্য ছাত্রীরা বিভিন্ন কলেজে স্নাতকস্তরে অনার্স পাবেন না। নার্সিং কোর্স বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার জন্যও ছাত্রীদের অসুবিধা হবে বলে দাবি করা হয়। বিক্ষোবকারী অভিভাকেরা জানান, একাদশ শ্রেণির নম্বর নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আগেই অভিযোগ জানানো হয়েছিল। বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা করেননি। এমনকি ৮ জন ছাত্রী অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। অভিভাবকদের দাবি, একাদশ শ্রেণির খাতা ছাত্রীদেরকে দেখানো হোক।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, গত বছর কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে কোয়রান্টিন সেন্টার করা হয়েছিল। সেই কারণে স্কুলে শিক্ষিকারা আসতে পারতেন না। এরই মাঝে কাউন্সিলের নির্দেশে দু’দিনের মধ্যে একাদশ শ্রেণির নম্বর পাঠাতে হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মল্লিকা হালদার জানান, একাদশ শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়টি গত ২৫ জুন কাউন্সিলকে জানানো হয়েছিল। পরীক্ষার ফল বেরোনোর পর দেখা যাচ্ছে কাউন্সিল স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে পাঠানো দ্বিতীয়বার জমা দেওয়া নম্বর অনুমোদন করেনি। রেজাল্ট নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ ২৬ জুলাই কাউন্সিলের কাছে জমা দেওয়া হবে। একই ভাবে রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের দাবি, স্কুল থেকে পাঠানো নম্বর চূড়ান্ত রেজাল্টে দেওয়া হয়নি।