আহত: সিউড়ি হাসপাতােল আহত মনোরঞ্জনবাবু। নিজস্ব চিত্র
রামপুরহাটের পরে সিউড়ি। চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ায় চোখ খোয়াতে বসেছেন গুরুতর জখম এক যাত্রী। পূর্ব রেলের অণ্ডাল-সাঁইথিয়া শাখার কচুজোড় আর সিউড়ি স্টেশনের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ।
রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাথরের ঘায়ে জখম হয়েছেন মনোরঞ্জন বসাক। বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি সাঁইথিয়া পুর-এলাকার বাসিন্দা। এ দিন তিনি অণ্ডাল-সিউড়ি লোকাল ট্রেন ধরে দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি আসছিলেন। বাইরে থেকে কেউ পাথর ছুড়লে সেটি ট্রেনের জানালায় ধাক্কা খেয়ে সরাসরি মনোরঞ্জনবাবুর বাঁ চোখে লাগে। মারাত্মক জখম হন তিনি। সিউড়ি জিআরপি থানার ওসি একবালুর রহমান বলেছেন, ‘‘জখম ওই যাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রক্ত ঝরছিল তাঁর চোখ দিয়ে। চোখের অবস্থা কেমন জানি না।’’
সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলছেন, ‘‘ওই রোগী ভর্তির পরে চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রভাত কুমার সিমলান্দি দেখেছেন। তবে যেটুকু তিনি দেখেছেন, তাতে রোগীর চোখের অবস্থা ভাল নয়। উন্নততর চিকিতসার জন্য রেফার করে দেওয়া হয়েছে।’’
আত্মীয় প্রদীপ কুমার বসাক ও শ্যালক প্রভাত বসাকের সঙ্গে এ দিন ওই ট্রেনে ফিরছিলেন তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মনোরঞ্জনবাবু। ওই দুই আত্মীয় জানান, ঠিক ছিল সিউড়িতে নেমে আর এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা সাঁইথিয়া ফিরবেন। জানলা ঘেঁষে একটা সিট পরেই বসেছিলেন মনোরঞ্জনবাবু। ট্রেন সিউড়ি ঢোকার বেশ কিছুটা আগেই ট্রেন লক্ষ্য করে ছোড়া পাথরটা তাঁর চোখের বাঁ দিকে সজোরে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘কে বা কারা এমন কাণ্ড করল কিছু বুঝতে পারিনি। রেল পুলিশকে জানিয়েছি ঘটনার তদন্ত করে দেখতে। কিন্তু, মনোরঞ্জনের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’’
এর আগে চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল রামপুরহাট ও তারাপীঠ স্টেশনের মাঝে। লাইনের ধার থেকে চোড়া পাথরের ঘায়ে মাথায় চোট পান বর্ধমানের নতুনপল্লির বাসিন্দা তুষারকান্তি মুখোপাধ্যায় নামে এক শিক্ষক। গত বছর অক্টোবরে শিয়াগহ-বনগাঁ শাখার বামনগাছি এবং দত্তপুকুর স্টেশনের মাঝে লোকাল ট্রেন লক্ষ্য করে পরের পর পাথর ছুড়েছিল দুষ্কৃতীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা পাথর এসে লাগে সাত বছরের এক শিশুর মুখে। মেয়েটির মুখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এ বার পের পাথর ছোড়ার শিকার হলেন এক ট্রেনযাত্রী।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখা এবং অন্য শাখাতেও ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া নিয়ে একাধিক ঘটনা ঘটলেও বীরভূমে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। তবে, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে জেলার দু’জায়গায় যে ভাবে দুই ট্রেনযাত্রী জখম হলেন, তা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে রেলপুলিশের। পূর্ব রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘ট্রেনে পাথর ছোড়ার চেয়ে জঘন্য অপরাধ হতে পারে না।’’ রেল পুলিশ জানিয়েছে, কে পাথর ছুড়েছে, সেটা আহত মনোরঞ্জনবাবু বা তাঁর সঙ্গীরা দেখতে পাননি। তবে এই প্রবণতা আটকাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।