পরিজনের কান্না। নিজস্ব চিত্র
প্রসূতি মৃত্যুর জেরে রামপুরহাটের একটি নার্সিংহোমে উত্তেজনা ছড়াল। সোমবার দুপুরে রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়ার একটি নার্সিংহোমে ঘটনাটি ঘটে। রামপুরহাট মেডিক্যাল থেকে রেফার হওয়া ওই প্রসূতি রবিবার বর্ধমান মেডিক্যালে মারা যান। প্রথমে রামপুরহাটের ওই নার্সিংহোমেই তাঁর চিকিৎসা হয়েছিল। এ দিন বর্ধমান থেকে দেহ এনে ওই নার্সিহোমের সামনে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান মৃতার আত্মীয় পরিজনেরা। মৃতার পরিজনদের অভিযোগ, নার্সিংহোমের গাফিলতির জন্যই ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, চিকিৎসকের পরামর্শ না মেনে রোগিণীকে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি এই সমস্ত চিকিৎসার জন্য বাড়িতে রাখা হয়েছিল বলেই তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। নার্সিংহোমে ঢুকে রোগীর পরিজনেরা নার্সিংহোমে ভাঙচুর করেন বলেও নার্সিংহোম কতৃপক্ষের অভিযোগ। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার আগেই মৃতদেহ নিয়ে চলে যান মৃতার পরিজনেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ দিন আগে রামপুরহাট থানার পানিসাইল গ্রামের বাসিন্দা প্রসূতি ইয়াসমিনা খাতুনের অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। পরিজনদের দাবি, অস্ত্রোপচারের পরের দিন থেকেই বছর বাইশের ওই তরুণীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। প্রচুর অ্যালার্জি বের হয়। তিন দিন পরে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে করোনা পরীক্ষার জন্য স্থানান্তর করে দেন বলে জানান পরিজনেরা।
নার্সিংহোমের মালিক, সিউড়ির বিধায়ক তথা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অশোক চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রসূতির গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নার্সিংহোমের চিকিৎসক তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যালে ভর্তি করে করোনা পরীক্ষা করার কথা বলেন। কিন্তু প্রসূতির পরিজনেরা তা না করে তাঁকে বাড়ি চলে যান বলে দাবি অশোকবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় সাতদিন ধরে ওঁরা হোমিওপ্যাথি-কবিরাজি কী সব চিকিৎসা করেছেন আমার জানা নেই। মাঝে অ্যালার্জির জন্য চিকিৎসককে দেখান। তিন দিন আগে আমার কাছে সেলাই কাটাতে এলে আমি সেলাই কেটে ড্রেসিং করে দিই। তখনও তাঁকে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য বলা হয়। সেদিনও হাসপাতালে ভর্তি না করে তাঁরা বাড়ি চলে যান।’’
ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রবিবার সকালে তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে আসেন তাঁর পরিজনেরা। মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আনন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘রোগিণীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সেই কারণে বর্ধমানে স্থানান্তর করা হয়।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। সোমবার রামপুরহাটে নার্সিংহোমের সামনে দেহ এনে বিক্ষোভ দেখান মৃতার পরিজনেরা। ভাঙচুরের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে জানান নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।