Satabdi Roy

বীরভূম তৃণমূলেরই থাকবে, দেড় বছর পর ‘অনুব্রতহীন’ বোলপুরে গিয়ে বললেন সাংসদ শতাব্দী

বীরভূম তৃণমূলেরই থাকবে, দেড় বছর পর ‘অনুব্রতহীন’ বোলপুরে গিয়ে বললেন সাংসদ শতাব্দী

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২৫
Share:

শতাব্দী রায় ও অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

প্রায় দেড় বছর পর বোলপুরে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে দেখা গেল তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। কলকাতা নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বুথকর্মী সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে সোমবার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন বীরভূমের সাংসদ। বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, বীরভূম তৃণমূলের দখলেই থাকবে। তাঁর দাবি, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে তৃণমূলই জিতবে। ঘটনাচক্রে, শতাব্দী যখন এই বার্তা দিচ্ছেন, সেই সময় দলের জেলা সভাপতি গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে। সেই অনুব্রত, যাঁর সঙ্গে শতাব্দীর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা দলের অন্দরে বিশেষ ভাবে আলোচিত।

Advertisement

রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে জেরবার শাসক দল তৃণমূল। এসএসসি-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার আগেই কর্মীদের মুখোমুখি হতে চেয়ে ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুথকর্মী সম্মেলনের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রে খবর, কলকাতার বৈঠকে তৃণমূলনেত্রীর সামনে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কী বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করতেই সোমবার বোলপুরের কার্যালয়ে একটি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন শতাব্দী। ছিলেন বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ-সহ জেলা কমিটির সদস্যেরা।

সূত্রের খবর, ওই বৈঠক দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে স্পষ্ট কিছু বার্তা দিয়েছেন সাংসদ। ‘অনুব্রতহীন’ বীরভূমে সংগঠনে কী ভাবে জোর দেওয়া যায়, সেই সংক্রান্তও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে বাইরে বেরিয়ে এসে শতাব্দী জানান, তৃণমূলনেত্রীর ডাকা সম্মেলন নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বীরভূম জেলা তৃণমূলেরই ছিল। তৃণমূলেরই থাকবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জিতবে তৃণমূলই।’’

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, শেষ বার শতাব্দীকে বোলপুর জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে দেখা গিয়েছিল ২০২১ সালে জুন মাসে। গত মাসে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বীরভূমের সংগঠন নিয়ে তৃণমূলের নানা স্তরে আলোচনা হচ্ছে, সেই আবহে সাংসদের হঠাৎ ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠে বৈঠকে যোগদান জেলার রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জল্পনা তৈরি হয়েছে বীরভূমে জেলবন্দি অনুব্রতের বিকল্প হিসাবে শতাব্দীর নাম নিয়েও। তবে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলা হয়নি।

এমনিতে অনুব্রত এবং শতাব্দীর ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে বীরভূমে। একটা সময়ে অনুব্রতের দাপটে ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে শতাব্দী বীরভূমের বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তৃণমূল সূত্রেই দাবি, শতাব্দী দলের অন্দরে অনুব্রতের সম্পর্কে বারংবার তাঁর উষ্মার কথা জানিয়েছেন। ধৈর্য হারিয়ে কখনও সখনও প্রকাশ্যেও মন্তব্য করে ফেলেছেন। কিন্তু দলের শীর্ষনেতৃত্ব শতাব্দীর বিরক্তিকে খুব একটা আমল দেননি। তবে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর পাশেই দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে সাংসদকে।

গত শনিবার বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে ‘কাদায় পড়া হাতি’ বলে উল্লেখ করে তাঁর পাশে থাকার বার্তা দেন শতাব্দী। তিনি বলেন, ‘‘হাতি কাদায় পড়লে টিকটিকিতে লাথি মারে। হাতি যখন কাদা থেকে উঠে জলে গা ধুয়ে বেরিয়ে আসবেন, তখন হাতি হাতিই থাকবে।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘টিকটিকি কে, তা বুঝতেই পারছেন।’’ দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েও শতাব্দী বলেন, ‘‘ভাল সময় অনুব্রত মণ্ডলকে পেয়েছেন। এখন সেই অনুব্রত যখন অসুবিধায় পড়েছেন, তখন তাঁর পাশে থাকা আমাদের নৈতিক কর্তব্য।’’

সোমবার অনুব্রত প্রসঙ্গে সাংসদকে কিছু বলতে না দেখা গেলেও জেলা সভাপতির সুরেই বার্তা দিয়েছেন শতাব্দী। তিনি বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আমরাই জিতব।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতার এমপি-এমএলএ আদালতে অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে এসে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে অনুব্রতকেও দাপটের সুরে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ব্যাপক হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement