ছেলে-মেয়ের অত্যাচার, পাশে প্রশাসন

বিধবা মাকে দেখে না ছেলে। মদ খাওয়ার জন্য মায়ের কাছে টাকা চেয়ে না পেলে মারধর ছিল রোজকার ঘটনা।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩১
Share:

ঘটনা ১— বিধবা মাকে দেখে না ছেলে। মদ খাওয়ার জন্য মায়ের কাছে টাকা চেয়ে না পেলে মারধর ছিল রোজকার ঘটনা। অতিষ্ঠ হয়ে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রঘুনাথপুর থানার ঠেকরা গ্রামের বৃদ্ধা চঞ্চলা কৈবর্ত্য। ছেলেকে ডেকে পাঠান মহকুমাশাসক। ছেলে আসেন না। মহকুমাশাসকের নির্দেশে পুলিশ গ্রেফতার করে আনে তাকে। ‘দ্য মেনটেনান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন-২০০৭’ আইনে বিচার হয় তার। নির্দেশ দেওয়া হয়— মাকে মাসোহারা দিতে হবে।

Advertisement

ঘটনা ২— কাশীপুরের বাসিন্দা মণীন্দ্রনাথ মোদকের অভিযোগ ছিল, ছেলেরা তাঁকে দেখে না। প্রথমে গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। বিশেষ সুরাহা হয়নি। তার পরে দ্বারস্থ হন মহকুমা প্রশাসনের। ওই একই ধারায় মণীন্দ্রনাথবাবুর চার ছেলেকে ডেকে পাঠিয়ে বিচার করা হয়। বৃদ্ধ বাবাকে দেখার জন্য তাদের বিশেষ নির্দেশ দেন মহকুমাশাসক।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এই ধরনের আরও চারটি মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। আরও তিনটি মামলা চ লছে রঘুনাথপুরের এসডিও কোর্টে। সব ক্ষেত্রেই বৃদ্ধ মা-বাবারা ছেলেদের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতি অত্যচার করা বা না দেখার অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রশাসন চাইছে, এমন ক্ষেত্রে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আরও বেশি করে এগিয়ে আসুন। সমস্যার কথা জানান। সে ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়াবে প্রশাসন।

Advertisement

২০০৭ সালে ‘দ্য মেনটেনান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন’ আইন প্রণয়ন হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, এসডিও আকাঙ্খা ভাস্কর এ বছর জুলাইয়ে রঘুনাথপুর মহকুমার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মহকুমা এলাকায় আইনটি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। নির্যাতিত বাবা-মায়েরা প্রশাসনের কাছে এলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করিয়ে বিশদে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের অভিযোগ। তার পরেই সমন পাঠানো হচ্ছে অভিযুক্ত ছেলেমেয়েদের। না এলে গ্রেফতার।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই আইন অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইবুন্যাল তৈরি হয়েছে এসডিও কোর্টে। সিঙ্গল বেঞ্চ-এর ট্রাইবুন্যালের বিচারক হিসাবে রয়েছেন এসডিও নিজে। পাশাপাশি আরও একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে এসডিও ছাড়া রয়েছেন আরও দুই আধিকারিক। মামলাগুলির ফসয়লাও হচ্ছে দ্রুত। আদালতের নির্দেশ ছেলে-মেয়েরা মানছে কি না সেটা দেখার জন্য বলা হচ্ছে পুলিশকে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে নিয়মিত সেই খোঁজখবর রাখছে পুলিশও।

তবে ঘটনা হল, নির্যাতিত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অনেকেই এখনও আইনটির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন। আর সেটা বুঝেই প্রশাসন চাইছে প্রচারে জোর দিতে। আকাঙ্খাদেবী বলেন, ‘‘বয়স্ক নাগরিকদের সুরক্ষায় এই আইন প্রণয়ন হলেও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে খুব একটা নাড়াচাড়া হয়নি। নির্যাতিত বাবা-মায়েদের সুরক্ষা দেওয়া জন্য আমরা বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছি।’’ তিনি জানান, ব্লকগুলিকে বলা হয়েছে এই ধরনের ঘটনা নজরে এলেই নির্যাতিতদের মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে যোগোযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য। তাতে কিছুটা ফলও মিলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

প্রচারের জন্য বয়স্ক নাগরিকদের সংগঠনগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই রঘুনাথপুর শহরের বরিষ্ঠ নাগরিক সভাকে সঙ্গে নিয়ে এই আইনের বিষয়ে বয়স্ক মানুষজনকে সচেতন করতে সেমিনার হয়েছে। এসডিও জানান, প্রতিটি ব্লক অফিসে এই আইন ও পরিষেবার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে ব্যানার টাঙানো হবে। প্রয়োজনে আশা কর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে বলা হবে, তাঁরা যেন গ্রামেগঞ্জে কাজ করার সময়ে এমন কিছু জানতে পারলে নির্যাতিতদের প্রশাসনের কাছে নিয়ে আসেন।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে রঘুনাথপুর শহরের বরিষ্ঠ নাগরিক সভা। সংগঠনটির কর্মকর্তা সুভাষ দে বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পরেই আমরা এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছি। কিছু ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। অনেকেই চট করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে রাজি হচ্ছেন না। আমরা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement